
এ বছর দিনাজপুর জেলায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা টকটকে লাল গুটি গুটি ফল যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। সুগন্ধি ও রসালো এই লিচুর স্বাদে রয়েছে আলাদা খ্যাতি। দিনাজপুরের লিচু খেলে বোঝা যায় এর স্বাদ কতটা মিষ্টি আর মনভরানো। ফলে প্রতি বছর এই অঞ্চলের লিচুর চাহিদা দেশজুড়ে বেড়েই চলে।
চাষিরা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছে গাছে ফল এসেছে প্রচুর। সঠিক সময়ে গুটি ধরেছে, সময়মতো বৃষ্টি ও আলো-ছায়ার ভারসাম্য থাকায় এবার রোগবালাইও তুলনামূলক কম। এতে করে লিচুর গুণগত মান ও উৎপাদন- দুই দিক থেকেই সন্তোষজনক ফলন আশা করছেন তারা।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, বিরল, বীরগঞ্জ, পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, বোচাগঞ্জসহ প্রায় সব উপজেলাতেই লিচু চাষ হয়ে থাকে। এখানে চাষ হয় বোম্বাই, চায়না-থ্রি, চায়না-টু, মাদ্রাজি, বেদানা ও এলাচি জাতের লিচু। এসব জাতের লিচুর মধ্যে বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি। বাজারে উঠার পর পরই পাইকাররা বিভিন্ন জেলা থেকে এসে লিচু কিনে নিয়ে যান।
নবাবগঞ্জ উপজেলার লিচু চাষি আব্দুল হাকিম জানান, “এবার গাছে প্রচুর লিচু এসেছে। আবহাওয়ার কারণে গুটিও ভালো ধরেছে। পরিচর্যা করতে একটু কষ্ট হলেও ফলনে খুশি আমরা। এখন যদি বাজার ঠিক থাকে, তাহলে এবার ভালো লাভ করা যাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, সরকার যেন চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে লিচু কিনে বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, এই সময়টায় চাষিরা গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ গাছে পানি দিচ্ছেন, কেউ কীটনাশক ছিটাচ্ছেন, আবার কেউ গাছের নিচের আগাছা পরিষ্কার করছেন। অনেকেই শ্রমিক লাগিয়ে গাছের ডাল বেঁধে দিচ্ছেন, যাতে অতিরিক্ত ফলের ভারে ডাল না ভেঙে পড়ে।
চাষিদের ধারণা, বৈশাখ মাসের শেষের দিক থেকেই বাজারে উঠতে শুরু করবে নতুন লিচু। প্রথমে বাজারে উঠবে চায়না-টু ও মাদ্রাজি জাত, এরপর আসবে বোম্বাই ও চায়না-থ্রি। লিচু সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় চাষিদের পুরো লাভ নির্ভর করে বাজারের চাহিদা ও দাম নির্ভরশীলতার ওপর।