
এবারের ঈদযাত্রা শতভাগ নির্বিঘ্ন না হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগের মাত্রা অন্যান্য বছরের তুলনায় বহুলাংশে কম ছিল। লম্বা ছুটি পাওয়ায় মানুষ ধীরেসুস্থে বাড়ি ফিরেছে। যে কারণে গোটা ঈদযাত্রায় একটি মসৃণ আবহ লক্ষ করা গেছে। পাশাপাশি পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ দৃশ্যত অধিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। সবকিছু মিলিয়ে ফল হিসেবে এবারের স্বস্তিদায়ক ঈদযাত্রা।
এবারের রমজান মাসে ও ঈদে আরেকটি বড় স্বস্তির বিষয় ছিল, অধিকাংশ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারদর সরকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। সরকারের আন্তরিক ইচ্ছা, প্রশাসনের নজরদারি এবং সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পেলে সব কিছুই সম্ভব, এবার তা প্রমাণিত হয়েছে।
তবে বেশ কিছু স্বস্তিদায়ক বিষয়ের মধ্য একটা বড় অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কে দুর্ঘটনা। এই নির্বিঘ্ন সড়কেও প্রতিদিন দুর্ঘটনার খবর আসছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ ঈদের ছুটিতে প্রথম চার দিনে বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা আরো বেশি। এটা আমাদের সড়কের অব্যবস্থাপনার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এই দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে কেবল সরকার নয়, বরং যাত্রী, চালক, পরিবহন শ্রমিক নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অধিকতর সচেতন ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
শহর অভিমুখে মানুষের ফিরতি যাত্রা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তবে তুলনামূলক দীর্ঘ ছুটি পাওয়ায় ফেরার ক্ষেত্রেও মানুষের মধ্যে তাড়াহুড়া নেই। আমরা আশা করি ফিরতি যাত্রাও এবার নির্বিঘ্ন ও মসৃণ হবে।
কোনো সড়কে অস্বাভাবিক যানজট হলে যানবাহনে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ভারী ও হালকা যানবাহন, স্বল্পগতির ও বেশি গতির বাহন একসঙ্গে চলা। মহাসড়কে ইজিবাইক, অটোরিকশা ইত্যাদি হালকা ও স্বল্পগতির যান চলাচল নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে এসব যান চলাচল একেবারে বন্ধ না হলেও অনেকটাই কমেছে। তবে একেবারে বন্ধ করা গেলে তা আরো ইতিবাচক হতো।
এবারের অভিজ্ঞতাকে ভবিষ্যতে কতটুকু কাজে লাগানো যায়, সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। এ বছরের মসৃণ ঈদযাত্রায় বাড়তি ছুটির দিন, সড়কব্যবস্থা, প্রশাসনের তদারকি, পরিবহনকর্মীদের দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়—কোনটি কতটুকু ভূমিকা রেখেছে, তা সুনির্দিষ্ট করে বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী আগামী ঈদযাত্রার ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্য পথনির্দেশনা নির্ধারণ করা যেতে পারে।
পাশাপাশি চলমান ফিরতি যাত্রায় যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য আগামী কয়েক দিন পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।