
নরসিংদীর রায়পুরায় হেযবুত তওহীদের নারী কর্মীদের উপর হামলা, অপহরণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ঘটনার মূল হোতা রুবেলের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে আসামি রুবেলের পক্ষে আইনজীবীর করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন নরসিংদী জুডিশিয়াল মেজিস্টেট আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলাম।
আসামি রুবেল বর্তমানে নরসিংদী কারাগারে আছে। রুবেল আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের হাসনাবাদ এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে। তিনি চরমোনাই পীরের রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা বলে জানা গেছে। মামলার অন্য আসামীরা হলো- হাসনাবাদ গ্রামের বকুল মিয়ার ছেলে সোহরাব মিয়া, একই গ্রামের ইব্রাহিম, আব্দুল আল মামুন, রাসেল, পলাশ সহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুন হাসনাবাদ বাজারে পত্রিকা বিক্রি করতে যান হেযবুত তওহীদের কর্মী জোবাইদা খাতুন, আয়েশা আক্তার খাদিজা ও শান্তনা আক্তার নিপা। এ সময় আসামী রুবেল সহ ১০-১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল ভুক্তভোগী নারীদের পত্রিকা বিক্রি করতে বাধা দেয়, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং জোরপূর্বক একটি প্রাইভেটকারে তুলে অপহরণের চেষ্টা চালায়। অপহরণে ব্যর্থ হয়ে প্রধান আসামী রুবেল উত্তেজিত হয়ে ধাড়ালো দা দিয়ে জোবায়দা খাতুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ মেরে গুরুতর জখম করে। এসময় আসামী সোহরাব মিয়া, ইব্রাহিম ও আব্দুল আল মামুন ভুক্তভোগীর মাথায় ও শরীরে এলোপাথারী কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে জখম করতে থাকে। এ সময় দেশেরপত্রের অপর বিক্রয় প্রতিনিধি আয়েশা ও শান্তনা মিলে জোবায়দা খাতুনকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে রাসেল, পলাশ সহ অজ্ঞাত আসামীরা বাঁশের লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাথারী মারধর, কিলঘুষি ও লাথি মারে। সংঘবদ্ধ আসামীরা ভুক্তভোগী নারীদের পড়নের কাপড়-চোপড় ধরে টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানি ঘটায়। এছাড়াও ভবিষ্যতে হাসনাবাদ বাজারে পত্রিকা বিক্রি করতে আসলে তাদের মেরে লাশ গুম করবে বলে হুমকি দেয় আসামীরা। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন জোবায়দা খাতুনসহ আহতদেরকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে ঘটনার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে নরসিংদী। প্রকাশ্য দিবালোকে নারীদের উপর এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে নরসিংদীর স্থানীয় জনতা ও সচেতন মহল মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, স্বারকলিপি প্রদান ও সংবাদ সম্মেলন করে।
ঘটনার পর গুরুতর আহত জোবায়দা খাতুনের স্বামী মোকশেদ আলী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক ঘটনার সত্যতা পেয়ে গত ২১ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে হাসনাবাদ বাজারে অভিযান চালিয়ে আসামী রুবেলকে গ্রেফতার করেন এসআই আমিনুল ইসলাম। পরে দণ্ডবিধির ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৬/৩০৭/৩৫৪/৪২৭/৫০৬ (২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়। রায়পুরা থানার মামলা নং-২২/(৬)২৪।
জানা যায়, আসামি রুবেল জেল হাজতে থাকা অবস্থায় আজ সোমাবার বেলা ১২টার দিকে তার আইনজীবী এডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল জামিন আবেদন করেন। নরসিংদী জুডিশিয়াল মেজিস্টেট ৪র্থ আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলাম জামিন আবেদন না মঞ্জর করেন। বাদী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট আবু রায়হান মো. দেলওয়ার হোসাইন।