
নাটোর সদর প্রতিনিধি:
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় বৈদ্যুতিক সেচ মোটর ও মিটার চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার হালতিবিল এলাকায় দুর্বৃত্তরা কৃষক সবুজ সরদার ও বকুল সরদারের বৈদ্যুতিক সেচ মোটর চুরি করে নিয়ে গেছে। এর আগে, একই এলাকায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ৭টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়েছে। এই ধারাবাহিক চুরির ঘটনায় স্থানীয় কৃষক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে চুরি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, চোরচক্র অত্যন্ত সংগঠিতভাবে এসব চুরি করছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, চুরি হওয়া মিটারের স্থান থেকে কাগজে মোবাইল নম্বর লিখে যায় চক্রটি। পরে সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে প্রথমে ৭ হাজার টাকা দাবি করে, এরপর ৫ হাজার টাকা গ্রহণের পরও মিটার ফেরত না দিয়ে আরও ২ হাজার টাকা দাবি করে। এমন প্রতারণার ফলে মিটার চুরি হওয়া কৃষকরা আরও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এছাড়া সম্প্রতি মাধনগর বাজারে ব্যবসায়ী বিদ্যুত সরদারের বরফ মিলের বৈদ্যুতিক মিটারও চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। একই কৌশলে টাকা দাবি করেও সেটি ফেরত দেওয়া হয়নি। এর আগে গত বছর হালতিবিল ও ব্রহ্মপুর ইউনিয়নে একাধিক ট্রান্সফরমার ও শ্যালো মেশিন চুরি হয়েছিল।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, “আমাদের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য বৈদ্যুতিক মোটর ও মিটার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাতের আঁধারে সেচ মোটর ও মিটার চুরি হয়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। এখন নতুন করে মোটর বসাতে এবং মিটার সংযোগ নিতে আমাদের প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হবে, যা কৃষকদের জন্য বাড়তি বোঝা।”
এদিকে বৈদ্যুতিক সেচ মোটর চুরি হওয়ায় কৃষকরা ফসল উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। বিশেষ করে বোরো ধানের মৌসুমে জমিতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা না গেলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের ভাষ্যমতে, সেচ মোটর চুরি হলে নতুন মোটর কিনতে অন্তত ২৫-৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। তার ওপর বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে বাড়তি সময় ও টাকা ব্যয় করতে হয়।
ভুক্তভোগী কৃষক বকুল সরদার ও সবুজ সরদার বলেন, “গত বছরও একের পর এক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এবার আবার ঘরের বেড়া কেটে, পাইপ ভেঙে আমাদের সেচ মোটর চুরি করা হয়েছে। এতে আমরা প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের কৃষিকাজের ব্যয় বেড়ে গেছে, আবার ফসলও মার খাচ্ছে।”
নলডাঙ্গায় বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার এবং বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমারের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। বিদ্যুৎ চুরি ও সেচ মেশিন চুরির ঘটনা প্রতিরোধে এর আগেও গ্রাহকরা মাইকিং ও রাত জেগে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, “আমরা ইতোমধ্যে ঘটনাগুলোর বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছি। এই চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রটিকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর নলডাঙ্গা সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. আল ইমরান আহমেদ বলেন, “চুরি প্রতিরোধে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়াতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রাহকদের নিজ এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।”
একের পর এক বিদ্যুৎ সরঞ্জাম চুরির ঘটনায় কৃষকদের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর দাবি, চুরি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করতে হবে এবং সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকলে চোরচক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।