শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ঘাকপাড়া দাখিল মাদরাসায় গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে এমন কমিটি গঠন করায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এই অবস্থায় বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি অভিযোগপত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর জমা দিয়েছেন।
অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ঘাকপাড়া দাখিল মাদরাসার সুপার নাজিম উদ্দিন গোপনে তফসিল ঘোষণা করে সুকৌশলে এবং কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা ছাড়াই নিজের মনমতো ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন। মাদরাসায় কর্মরত অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবক ও এলাকাবাসীকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন হঠকারী ও দুরভিসন্ধিমূলক কার্যক্রমে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
অভিভাবক জালাল মিয়া, সোহাগ মিয়া, আলমগীর হোসেন, নুরুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, জয়নাল মিয়া, হেলাল উদ্দিন, আব্দুল জলিলসহ এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদরাসায় নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে নিয়োগ খালি থাকায় অসৎ উদ্দেশ্যে কাউকে না জানিয়ে অবৈধভাবে মনগড়া ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে নিয়োগের পাঁয়তারা করছেন সুপার নাজিম উদ্দিন। তারা আরও জানান, এর আগেও কমিটি গঠন নিয়ে সুপার অবৈধ পন্থার আশ্রয় নিলে ইউএনও বরাবর অভিযোগের পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটিতে বারবার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে মাদরাসার সহকারী মৌলভী খলিলুর রহমান জানান, মাদরাসার কমিটি সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বা অন্যান্য শিক্ষকরা কিছুই জানেন না। কমিটি গঠন হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও তাদের কিছু জানানো হয়নি। দুই-একজন শিক্ষক ছাড়া বাকি কেউই নতুন গঠিত কমিটির বিষয়ে অবগত নন বলেও জানান একাধিক শিক্ষক।
অভিভাবক আব্দুর রশিদ বলেন, "আমার মেয়ে এই মাদরাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অথচ আমাকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়নি এবং কমিটির বিষয়েও কিছুই জানানো হয়নি। আমি সুপার স্যারের কাছে কমিটি গঠন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার সাথে অসৎ আচরণ করে বলেন, আপনি যা করতে পারেন, করেন।" এমন অভিযোগ করেছেন মাদরাসার অধ্যয়নরত শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রত্যেক শ্রেণীকক্ষে খসড়া ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা জানায়, এ ধরনের কোনো তথ্য তাদের জানানো হয়নি। এমনকি ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয়েছে, সে সম্পর্কেও তারা অবগত নয়।
অন্যদিকে, সুপার নাজিম উদ্দিন দাবি করেন, সকল নিয়ম মেনে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে তিনি কাউকে কমিটির কাগজ দেখাতে রাজি হননি। মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের নাম জানতে চাইলেও তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান সুপার। দাম্ভিকতার সুরে তিনি বলেন, "আমার কর্তৃপক্ষ ছাড়া কাউকে কমিটির কাগজ দেখাবো না, এমনকি মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও না।"
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. চাঁন নিয়া জানান, ঘাকপাড়া দাখিল মাদরাসার কমিটি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার ববি বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের এই অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।