
জাতীয় শি¶াক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকে ভুল ও অসংগতি ধরা পড়ে বারবার। বহু আলোচনার পরও এটি দূর না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এ ছাড়া নিম্নমানের কাগজ-কালিতে বই ছাপার বিষয়টিও উদ্বেগজনক। বিনামূল্যের পাঠ্যবই ত্রুটিমুক্ত করার কাজটি কি খুব কঠিন? প্রতিবছরই এ ¶েত্রে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ প্রবণতার অবসান হওয়া জরুরি। চলতি বছর সরবরাহকৃত বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিম্নমানের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য যৌথ তদন্ত দাবি করেছেন মুদ্রাকররা। কয়েকদিন আগে মুদ্রণশিল্প সমিতির নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক মুদ্রাকর এনসিটিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে সা¶াৎ করেন। তারা নিম্নমানের বই সরবরাহকারী এবং যারা বই সরবরাহে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন তাদের বিচার দাবি করেছেন। মুদ্রণ-স¶মতা নিরূপণ করে বইয়ের কাজ দেওয়ার জন্য তারা কর্তৃপ¶ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বই সরবরাহের আগে একটি প্রতিষ্ঠান এবং পরে যে কোনো স্কুল থেকে এনে আরেক প্রতিষ্ঠান কাগজসহ বইয়ের সার্বিক মান যাচাই করে থাকে। চলতি বছর একই পরিবারের দুই ব্যক্তির দুই প্রতিষ্ঠানকে বইয়ের মান তদারকির কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া বই সরবরাহেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মুদ্রাকরদের দাবির পরিপ্রে¶িতে বই সরবরাহে অনিয়ম, বিশেষ করে তারিখ জালিয়াতি করে ‘পরে’ বই সরবরাহ করে ‘আগে’ দেখানোর অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে এনসিটিবি। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এ ধরনের অনিয়ম সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিষয়টি বহুল আলোচিত। আমরা মনে করি, এ-সংক্রান্ত সব দুর্নীতির তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে দরপত্রে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের স¶মতার তথ্য উল্লেখ করা হতো। এখন সেটি নেই। ফলে কোন প্রতিষ্ঠানকে কীসের ভিত্তিতে বই প্রকাশের কাজ দেওয়া হচ্ছে, তা বোঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ যাতে অযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান না পায়, তা নিশ্চিত করা জরুরি। মানহীন কাগজ ও কালিতে বই মুদ্রণের ফলে সরকারের দুর্নাম হয়; একই সঙ্গে এসব বই শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এ বছর পুস্তক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নমানের কাগজ-কালিতে বই ছেপে কোনোরকম বাঁধাই করে এনসিটিবির কাছে হস্তান্তর করেছে। বই ছাপাবিষয়ক সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এনসিটিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার কথা আমাদের জানা নেই। এনসিটিবি কর্তৃক প্রকাশিত বিভিন্ন শ্রেণির বই হাতে নিলে বোঝা যায় প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বই ছাপাবিষয়ক নূন্যতম অভিজ্ঞতাও নেই। যেহেতু বছরের পর বছর মানহীন বই প্রকাশিত হচ্ছে, সেহেতু এটা স্পষ্ট, পুস্তক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এনসিটিবির দুর্নীতিবাজদের যোগসাজশ রয়েছে। এ নিয়ে এত আলোচনা হলেও কর্তৃপ¶ের ঘুম কেন ভাঙছে না, এটা বিস্ময়কর! বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে প্রতিবছর প্রায় একই রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ বছরের সমস্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় গুরুতর। কর্তৃপ¶ের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রতিবছর দেশের বিপুলসংখ্যক শি¶ার্থী সময়মতো বই পায় না। এতে তাদের শি¶াজীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়ে যাচ্ছে। এর কি কোনো সমাধান নেই? শি¶ার্থীদের হাতে নির্ভুল-মানসম্মত বই সময়মতো পৌঁছে দিতে কর্তৃপ¶কে পেশাদারত্ব ও আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে।