Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / খুলনা / পাম্প সচল থাকলেও পদ্মায় পানি শূন্যতায় জিকে সেচ কার্যক্রম বন্ধ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

পাম্প সচল থাকলেও পদ্মায় পানি শূন্যতায় জিকে সেচ কার্যক্রম বন্ধ

May 08, 2024 08:59:44 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
পাম্প সচল থাকলেও পদ্মায় পানি শূন্যতায় জিকে সেচ কার্যক্রম বন্ধ

মিন্টু হোসাইন, ভেড়ামারা সংবাদদাতা:
তিনটি পাম্পের মধ্যে একটি পাম্প সচল থাকলেও পদ্মা নদীতে পানি কম থাকার কারণে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) সেচ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে সেচ প্রকল্পের তিনটি পাম্প অচল হয়ে পড়ায় খালে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিলো। এখন একটি পাম্প সচল করা হলেও পদ্মা নদীতে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এজন্যই বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের বৃহৎত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম। সেচ প্রকল্প কবে পুনরায় চালু হবে তা কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। তবে পদ্মায় পানির প্রবাহ না বাড়লে পুরায় সেচ চালুর কোনো সম্ভবনা নেই। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান পানির উৎস পদ্মা নদী। পদ্মায় পানি কমে গেছে। পাম্প চালু করতে প্রয়োজন পদ্মা নদীর সঙ্গে যুক্ত ইনটেক চ্যানেলে ন্যূনতম পানির স্তর ৪.৫ মিটার রিডিউসড লেভেল (আরএল) পানি থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে পদ্মা নদীতে প্রয়োজনীয় পানির স্তর নেই। এই মুহূর্তে ইনটেক চ্যানেলে ৪ এর একটু বেশী রিডিউসড লেভেল রয়েছে। এই ডিসচাজ দিয়ে ইরিগেশন সম্ভব হবে না। মানে যে পরিমাণ পানি পাম্প উত্তোলন করতে পারবে, তা কৃষকের কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পদ্মায় পানির লেভেল বৃদ্ধি পেলে তখন পানি সরবরাহ করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও পানি ৪.৫ মিটার আরএলের নিচে নামলে পাম্প মেশিনের কয়েল ও বিয়ারিংয়ের তাপমাত্রা বাড়ে। এতে করে মেশিনে শব্দ ও ঝাঁকুনি হয়। এই সব সমস্যার কারণেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশনায় পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাবনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উত্তরাঞ্চল পানি পরিমাপক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানান, পদ্মায় পানি কমেছে। গতকাল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির লেবেল ৪.৩০ মিটার ছিল। আপাতত পানির স্তর কমের দিকে বলে তিনি জানান।

সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের আওতায় চলতি বোরো মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা চার জেলার ১৩টি উপজেলার ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালের মাধ্যমে ১০ মাস পানি দেওয়ার কথা ছিল। যথাসময়ে পানি সরবরাহ না হওয়ায় সেচ প্রকল্পাধীন এলাকার প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহতসহ খরচ বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

একদিকে পানিশূন্যতা অপরদিকে তীব্র দাবদাহে মাঠের পর মাঠ ফেটে চৌচির। খালে কবে পানি আসবে দিন গুনছে প্রকল্প এলাকার চাষিরা। তবে পদ্মায় পানির প্রবাহ না বাড়লে পুরায় সেচ চালুর কোনো সম্ভবনা নেই বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

জিকে সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চার জেলার কৃষির গুণগত মান বৃদ্ধি, স্বল্প ব্যয় এবং উৎপাদন বাড়ানো এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল। চার জেলার ১৩ উপজেলার ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমি প্রকল্পের আওতাধীন ছিল প্রথম দিকে। পরে প্রকল্পের এলাকা আস্তে ধীরে কমে আসে। ২০২১ সালের ১৫ ও ১৭ জানুয়ারি মাসে সেচ সুবিধা দিতে জিকে সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্প চালু করা হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা এবং ঝিনাইদহের কৃষকদের এই সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। এগুলো একযোগে সেকেন্ডে এক হাজার ২০০ কিউসেক পানি সরবরাহে সক্ষম। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি দিয়ে ১০ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে খালে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দুটি পাম্প অচল হয়ে যায়। পরে একটি মেরামত করা হয়।

ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম এলাকার কৃষক ও পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বুলবুল কবির বলেন, ‘আমার ধানের জমিতে পানির দরকার কিন্তু পানি পাচ্ছি না। কখনও পাম্প নষ্ট, আবার কখনো নদীতে পানি নেই, এমন জানতে পারছি। এ মওসুমে জিকে ক্যানেলে পানি না থাকায় এর আশেপাশের নলকূপেও পানি উঠছে না। পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে গেছে। প্রধান খালে পানি থাকলে এ ধরনের সমস্যা হতো না। এবার ফসল ফলাতে বিঘাতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। তারপরও উৎপাদন সেভাবে হবে বলে মনে হয় না।

তিনি আরও বলেন, ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং পানি চুক্তি করেও পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় পদ্মার বুকে এখন শুকনো বালুর চর দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাম্প স্টেশন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জিকে পাম্পের বর্তমান অবস্থা ও সচল করার পরিকল্পনার বিষয়ে বলেন, পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর এক কিলোমিটার ভাটিতে দেশের বৃহৎত্তম সেচ প্রকল্প জিকে প্রজেক্ট। সেচের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সরকার ১৯৫৪ সালে ভেড়ামারা জিকে সেচ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। ১৯৬৯ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। প্রকল্পের প্রধান তিনটি পাম্প ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জাপানের ইবারা করপোরেশন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।

তিনি আরও বলেন, এর আগে ১৯৬৯ সালে হিটাসি কর্তৃক এ পাম্পগুলো বসানো ছিলো যা ২০০৫ সাল পর্যন্ত চলে। এর মধ্যে তিন নম্বর পাম্পে ২০১৭ সালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একবার সমস্যা হয়। আমরা মেরামত করা হয়। পরে আবারও সমস্যা দেখা দেয়। দুই নম্বর পাম্পটি ২০২১ সালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এখন এটি সেভাবেই আছে। বর্তমানে এক নম্বর পাম্পটি সচল রয়েছে।

তিনি বলেন, তিন নম্বর পাম্পটি জাপানের ইবারা করপোরেশনের মাধ্যমে মেরামতের প্রক্রিয়ার মধ্যে চলমান রয়েছে ও কাজের অগ্রগতি হয়েছে। কিছু যন্ত্রাংশ লাগবে সেগুলো আমদানির প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। দুই নম্বর পাম্পটির মেজর সমস্যা ও ব্যায় সাপেক্ষে। সেজন্য সমস্যাগ্রস্ত পাম্পগুলো মেরামত করতে ডিপিটি প্রক্রিয়া গঠন করা হয়েছে। যা পরিকল্পনা কমিশনে প্রক্রিয়াধাীন রয়েছে। যদি ডিপিটি পাস হয় তাহলে এই তিনটি পাম্পের পুনর্বাসন কাজ সম্পন্ন হবে।ডিপিটিতে অন্তর্ভুক্ত নতুন ১০ সাবসিডিয়াবী পাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।