Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঢাকা / পাংশায় তালের শাঁস বিক্রির ধুম - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

পাংশায় তালের শাঁস বিক্রির ধুম

May 19, 2023 07:47:23 PM   উপজেলা প্রতিনিধি
পাংশায় তালের শাঁস বিক্রির ধুম

আকাশ মাহমুদ:
রাজবাড়ীর পাংশার বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে লোভনীয় ফল তাল শাঁস বেচাকেনা। বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মৌসুমী এই ফলটি কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আর চোখে পড়ে বিক্রেতারা হাঁসুয়া বা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাল কেটে তালের শাঁস বের করার দৃশ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ীর জেলার পাংশা উপজেলার পৌর শহরের বাজারস্থ রেলওয়ে স্টেশন, কালীবাড়ী মোড়, ট্যাম্পু স্ট্যান্ড, আজিজ সরদার বাস স্ট্যান্ড ও পুরাতন বাজারসহ বিভিন্ন গলিতে, রাস্তার পাশে তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। তিন আটি অনুযায়ী ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে এই তালের শাঁস। এক একটি তালের ফলে দুই / তিনটি করে শাঁস পাওয়া যায়। দামে সস্তা হওয়ায় সবার কাছে অতিপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফলটি, পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে মানুষ গ্রহণ করছেন। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের পছন্দের খাবার হিসেবে সমাদৃত তালের শাঁস। মানুষের চাহিদা থাকায় পাংশাজুড়ে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে এই ফল।

এখন চলছে মধু মাস। আর এই মধু মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে হরেক রকমের সুস্বাদু ফল। এই ফলের তালিকায় রয়েছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও অন্যতম আরেকটি ভিন্নধর্মী ফল তালের শাঁস। তাল ফলের নরম অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি “তালের লেপা নামে বেশি পরিচিত। কেউ বলে তালশাঁস আবার কেউ বলে তালের চোখ, কেউ বলে তালকোরা। প্রচন্ড গরমে তালের এই শাঁসটি শহর কিংবা গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়।

জৈষ্ট্যের তীব্র তাপদাহে ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ, ভ্যাপসা গরমে একটু স্বস্তি পেতে সবাই যখন একটু শীতল ছায়া আর তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানীয় খুঁজছেন, তখন সেই চাহিদা মেটাচ্ছে রসালো, নির্ভেজাল, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত এই তালের শাঁস। কচি তালের শাঁস ও পাকা তাল বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এর বেশিরভাগ অংশ জলীয় হওয়ায় এটা খেলে দ্রুত শরীরে পানিশূন্যতা দূর হয়।
একসময় প্রচন্ড গরমে জনসাধারণের তৃষ্ণা নিবারণের অন্যতম পানীয় ছিল ডাবের পানি। কিন্তু এবছর ডাবের দাম অত্যাধিক (৭০/৮০টাকা) হওয়ায় অনেকের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাহিরে। এমনকি শহর থেকে শুরু করে গ্রামেও বেশ চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে ডাব। যার ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাহিরে অতিপ্রিয় পানীয় ফল ডাব। আর ঠিক সেই জায়গায়টা দখল করে নিয়েছে তালের শাঁস। সহজলভ্য ও মুখরোচক হওয়ায় এ সময় বিভিন্ন বয়সী শ্রেণী পেশার মানুষের পছন্দের ফল তাল শাঁস।

মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর বিখ্যাত টুপি এই তালের আঁশ দিয়েই তৈরি। তালের ডোঙা বর্ষাকালে গ্রামবাংলার অন্যতম বাহন। তালের রস, তালের গুড়, কচি তালের শাঁস, পাকা তাল, তালের পিঠা, পাকা তালের বিচির শাঁস এরসবই অত্যন্ত মজার ও উপাদেয় খাবার। তাল এর দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়।

সূত্র মতে, বাংলাদেশের সর্বত্র তালগাছ দেখা যায়। তালগাছ শাখা-প্রশাখা বিহীন একবীজপত্রী উদ্ভিদ। তালগাছ বাড়ির আনাচে-কানাচে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে, পরিত্যক্ত স্থানে বেশি দেখা যায়। তবে দিনে দিনে বিলুপ্তির পথে তালগাছ। তালগাছ কিন্তু দীর্ঘজীবী। পৃথিবীর বহু দেশে তালগাছ আছে। এই গাছ কমবেশি শতবছর বাঁচে। তালগাছের প্রতিটি অংশই আমাদের প্রয়োজনীয়। পাতায় ঘরের ছাউনি, জ্বালানি, গরমের বন্ধু হাত পাখা, পাতার ডগার আঁশ দিয়ে মাছ ধরার নানা যন্ত্র তৈরির উপকরণের যোগানদার এই তালগাছ।

পুরাতন বাজারে ফুটপাতে তাল শাঁস বিক্রেতা নাজমুল মোল্লা  বলেন- শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবার কাছে প্রিয় তালের শ্বাস। আবার মৌসুমি ফল বলে শখের বশেই অনেকে এটি খায়। দামেও বেশ সস্তা। তাই বাজারে এর কদরও বেশি। তিনি প্রতিদিন ২৫০-৩০০ পিস তাল বিক্রি করে থাকেন। প্রতিটি তাল তিন আটি অনুযায়ী ১০ টাকায় বেচাকেনা হয়। প্রতিটি তালের পাইকারি কেনা পরে ৫ টাকা থেকে ৬ টাকা।

এছাড়া ভ্যানগাড়ীতে করেও ভ্রাম্যমাণভাবে শহরে ঘুরে ঘুরে অনেকে বিক্রি করছেন। এমনই একজন বিক্রেতা কালুখালী উপজলেলার বোয়ালিয়া ইউপির বাস্তেখোলা গ্রামের সাগর মন্ডল। তিনি আগে এমনি সময় ভ্যান চালাতেন। এখন ভ্যানগাড়ীতে করে তালের শাঁস বিক্রি করছেন। তিনি জানান, তালগাছের মালিকের কাছ থেকে প্রতি পিচ গাছ। ৩০০-৫০০ টাকা করে ক্রয় করেন। তাদের প্রতি পিস গড়ে ৫-৬ টাকার মতো খরচ পরে। তারা নিজেদের খরচ অনুযায়ী লাভের হিসেব রেখে ৩ আটি ১০ টাকা করে বিক্রি করে থাকেন। দিন শেষে লাভের অংশ হিসেবে ১০০০-১২০০ টাকা থাকে।

ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পরিবারের সবার জন্য তালের শাঁস ক্রেতা টিপু ইসলাম বলেন, এখন ফরমালিন বা কেমিক্যাল ছাড়া কোনও ফল পাওয়া মুশকিল। সেখানে তালের শাঁস সর্বোৎকৃষ্ট। কোনও ধরনের ভেজাল নেই। গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি তালের শাঁস অনেক উপকারী। এটা ডায়েটের জন্য বেশ কার্যকর। এছাড়া শুষ্ক ত্বক ও চুল পড়া বন্ধ করে। লিভার, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তশূন্যতা এগুলোর জন্যেও উপকারী। এটা খেতেও সুস্বাদু। এজন্য নিজে খেলাম পরিবারের সদস্যদের জন্যেও নিলাম।

রমজান হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, বাজারে আসা অসংখ্য ফলের চেয়ে তালশাঁসের বৈশিষ্ট্য আলাদা। অন্যান্য জিনিসের যে দাম তার থেকে এগুলো অনেক ভালো, দামেও সস্তা, এছাড়া বাচ্চাদেরও পছন্দ। এটাতে নেই কোন ভেজাল, একদম প্রাকৃতিক একটি খাবার পানীয় তাই অনেকগুলো ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।