
স্টাফ রিপোর্টার:
শীত বিদায়ের পর বসন্তের আগমন শুরু হয়েছে। বসন্তের ৯ম দিন গতকাল বিকেলে ঢাকায় শুরু হয় মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি। শীতের শেষ হয়ে বসন্তের আগমন হয়েছে, আর এর সাথে একদিকে কিছুটা গরম অনুভূত হলেও, ফাগুন মাসের বৃষ্টি ঢাকাবাসীর জন্য এক স্বস্তির নিঃশ্বাস হয়ে এসেছে। দূষণের কবলে থাকা রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি কখনও কখনও নগরবাসীর জন্য এক প্রশান্তি এনে দেয়, এবং আজকের বৃষ্টিতে সেই স্বস্তির অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে।
বৃষ্টির ফলে ঢাকার পরিবেশে যে ধুলাবালি এবং দূষণ ছিল, তা অনেকটা কমে গেছে। শহরের রাস্তায়, সড়কে ও পরিবেশে ঝরঝরে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় নগরবাসী যেন এক নতুন শ্বাস প্রশ্বাস নিয়েছে। এই বৃষ্টির মাধ্যমে শুধু তাপমাত্রা শীতল হয়নি, পাশাপাশি ধুলাবালির স্তরও অনেক কমেছে, যা ঢাকাবাসীদের জন্য এক প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি করেছে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ ভোরে সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেতে পারে, অন্যদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রাও কিছুটা কমবে, তবে প্রায় সব স্থানেই এটি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়া পূর্বাভাস আরও জানিয়েছে, আজকের বৃষ্টির পাশাপাশি সারাদেশের আটটি বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে, দেশের অন্যান্য অংশে আবহাওয়া আংশিক মেঘলা থাকার পাশাপাশি শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে ভোরের দিকে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে, যা দিনব্যাপী কিছুটা শীতল আবহ সৃষ্টি করবে।
এছাড়া, বসন্ত ঋতু যে সময়টি শুরু হয়, এটি শীতের পর আসে এবং গ্রীষ্মের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়। ফাল্গুন মাসে বসন্তের আগমন ঘটে, যা ষড়ঋতুর শেষ ঋতু হিসেবে পরিচিত। এই ঋতু পৃথিবীজুড়ে প্রকৃতির এক নতুন রূপ নিয়ে আসে, যখন গাছপালা নতুনভাবে বেড়ে ওঠে, ফুল ফুটে এবং নতুন জীবনের জন্ম হয়। বসন্তের এই সময় গাছপালায় নতুন পাতা গজায়, ফুল ও ফলের উৎপাদন বাড়ে, যা প্রকৃতির জীববৈচিত্র্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মহুয়া, কুসুম, গাব, পলাশ, বেলীসহ নানা ধরনের ফুল এই ঋতুতে ফুটে ওঠে, যা প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় এবং মানুষের মনকে সজীব করে তোলে।
বিশেষ করে ঢাকায়, যেখানে প্রতিদিনের বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়, সেখানে বৃষ্টি এসে স্বস্তির আভা নিয়ে আসে। ঢাকার মানুষ বৃষ্টির ফোঁটা উপভোগ করে, যেমনটি তারা প্রায়ই বছরের এই সময়ের দিকে অভ্যস্ত হয়ে যায়। মানুষের মনে তখন আসে এক ধরনের শান্তি, যেন বৃষ্টি সব কিছু ধুয়ে ফেলে, দূষণ থেকে মুক্তি দেয় এবং প্রকৃতির সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ দেয়।
অন্যদিকে, আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলছেন, বসন্তের এই সময় পৃথিবী সূর্যের দিকে হেলে থাকায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ফুল ও গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, যার ফলশ্রুতিতে বসন্তে ফুলের আবির্ভাব ঘটে। এই ঋতুতে ফুলের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি গাছপালা নিজেদের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পায় এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য এক নতুন মাত্রায় পৌঁছায়।
নগর জীবনে এই ধরনের মৌসুমী পরিবর্তন ঢাকাবাসীর জন্য এক বড় ধরনের আরামদায়ক অনুভূতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজকের প্রথম বৃষ্টির মাধ্যমে বসন্ত ঋতু ঢাকায় স্বস্তি নিয়ে এসেছে, এবং মানুষের মনে একটি সজীব, প্রফুল্ল অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।