
চলতি বছর অনাবৃষ্টি ও টানা তাপপ্রবাহের কারণে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দেখা দিয়েছে কাপাসিয়ার লিচু চাষিদের। কাপাসিয়ার লিচু প্রতি বছর বাজারে প্রথম দিকে আসে বলে এর আলাদা খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর ফলনে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন লিচু চাষিরা।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে লিচু বাগানে গেলেই থোকায় থোকায় লিচু নজরে আসে। মিষ্টি ও রসালো স্বাদের বিভিন্ন জাতের লিচুর সমাহার রয়েছে বাগান গুলোতে। এসব বাগানে বোম্বাই, কালিপুরী, চায়না-থ্রি এবং দেশী লিচুর সমারোহে ছেয়ে গেছে বাগান গুলোতে।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজারসহ, বাড়ৈগাও, বড়চালা, ফুলবারিয়া, নাশেরা, নাজার, রাউনাট গ্রামের বিভিন্ন লিচুবাগানে গিয়ে দেখা গেছে বাগান থেকে সংগ্রহ করা লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাতে প্রস্তুত করছে চাষীরা। প্রতিদিন এই এলাকা থেকে, সিএনজি, পিকআপ, সহ ৪-৫ টি ট্রাকভর্তি লিচু দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বলে চাষীরা জানায়।
এলাকার সড়কের পাশে, বাড়ির উঠানে ও লোকালয়ে সব জায়গায় দুই-একটা করে লিচু গাছ রয়েছে। প্রতি বাড়িতেই লিচু গাছ থাকা যেন এই এলাকার ঐতিহ্য। এছাড়াও এসব বড়-ছোট লিচু বাগানের পাশেই চলছে লিচু উৎসব। গাছ থেকে যত্ন সহকারে পাকা লিচু ছিড়া, পরিচর্যা করা। এবং সেই সব লিচু গণনা করে বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক, ইজারাদার ও শ্রমিকরা।
রাণীগঞ্জ বাজারের সড়কের দুই পাশে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই লিচু বিক্রি করছেন। সড়কে প্রায় যানবাহন দাড়িয়ে তাদের থেকে সেই লিচু কিনছেন। খুচরা ও পাইকারী দামে যার যেমন ইচ্ছা ক্রয়-বিক্রয় করছেন। আবার পাইকারি দরে লিচুর বেচাকেনা চলছিল। তাতে সারি সারি লিচু ভর্তি বাঁশের ঝুড়ি। আর সেই বাঁশের ঝুড়িতে সবুজ পাতার বিছানা। ওই ঝুড়িতে থাকা লাল ও সবুজ রঙের থোকা থোকা লিচু নজর কাড়ছে সবার। তাতে ভালো মানের লিচু পাইকারী দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি হাজার ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়। অপরদিকে খুচরা বাজারে আকার অনুসারে একেকটি লিচু এক থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
বিগত বছর গুলোতে বর্ষা হলে লিচু বড় হয় কিন্তু এবার লিচু বড় হচ্ছে না বরং গাছ থেকে প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে। ফলে ক্ষেত মালিকরা তাদের লিচু বাগান নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে। ক্ষেত মালিকরা বলছেন অনাবৃষ্টির কারণে লিচু পুষ্ট না হওয়ায় এ বছর আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন চাষিরা। দেশি জাতের লিচু তুলনামূলক অনেক মিষ্ট হয় এবং চাহিদা ও বেশি থাকে।
কুমিল্লা বাঞ্ছারামপুর থেকে আসা পাইকার শাহ আলম বলেন, এখানকার লিচুর মান ভাল খেতে মিস্টি প্রতিদিন লিচু নিয়ে বিক্রি করে লাভবান হয়।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থেকে এসেছেন রোমান, তিনি জানান কাপাসিয়ার লিচু সুস্বাদু আমি সবসময় এখান থেকে লিচু নিয়ে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি। এবছর লিচুর ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি।
উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন, কাপাসিয়ার অনেকেই বানিজ্যিক হিসাবে লিচু বাগান করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেছে থাকে। এবছর কাপাসিয়ায় লিচুর আবাদ ৩২৭ হেক্টর উৎপাদন ২১২৫ মেঃটন। লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে।
বাগান মালিক বলছেন অনাবৃষ্টির কারণে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকার লিচু বাগানেই এ বছর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এ ছাড়া লিচু আশানুরূপ পুষ্টও হচ্ছে না। অনেকে বিভিন্ন মেডিসিন ও পানি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত তাতে ও কোন লাভ হচ্ছে বলে দাবি করে বাগান মালিকদের
বুমভাই, ভেলারী ও চায়না-৩ লিচু বর্তমানে ব্যাপক ভাবে চাষ করেছে অনেকেই। এসব লিচু পর্যায়ক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে লিচু আগাম বাজারে আসে, ক্রেতারা ও নুতর মৌসুমি ফল সখের মনেকরে ক্রয় করতে ঝুকে পড়ে।এ কারণে ভালো দাম পাওয়ায় এখানকার চাষি ও লিচু ব্যবসায়ীরা অনেকটাই লাভবান হন।
বাড়িগাও গ্রামের তারা মিয়া বলেন, তিনি প্রায় ৮ বছর মুকুল অবস্থায় অনেক সময় ব্যবসায়িদের কাছে বাগান বিক্রি করে দেন, আবার কোন কোন বছর লিচু একটু পুষ্টু হলে বাগান বিক্রি করেন। তিনি প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করেন। কিন্তু এবার বাগান লিচু কম ধরার কারণে দাম অর্ধেক হবে বলে মনে করছেন। ফলে এবার তার বাগানে লোকসানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রানীগঞ্জ বাজারের ইজারাদার মো: আবুল হোসেন বলেন, আমরা প্রতি হাজারে ৮০ টাকা খাজনা নিচ্ছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা আসেন লিচু নিতে।