Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সম্পাদকীয় / বেকারত্বে জর্জরিত বাংলাদেশ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

বেকারত্বে জর্জরিত বাংলাদেশ

January 31, 2023 06:24:42 PM   সম্পাদকীয়
বেকারত্বে জর্জরিত বাংলাদেশ

বেকারত্ব প্রতিটি জাতির জন্য অভিশাপ স্বরূপ। সময় যতই বেড়ে যাচ্ছে, বেকারত্বের সংখ্যাও ততই বাড়ছে। বেকারত্বের কারণে দেশে নানা সমস্যা দেখা দিলেও দুর্ভাগ্যবশত দেশ রাতারাতি এই রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না। বর্তমানে ১৩৫ কোটি লোকের ২৭% লোক বেকারত্ব সমস্যায় ভুগছেন। সংখ্যাটা সাংঘাতিক ভাবে বেশি, মানে ৩৬ কোটি লোক এ সমস্যায় জর্জরিত। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিতদের প্রায় অর্ধেকই বেকার। আবার অনেকেই করোনা কালীন সময়ে চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে নতুন কর্ম না পাওয়ায় বেকার হয়ে ঘুরছেন। এ ছাড়া নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হলেও প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীরা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পান না।
বেকারত্ব প্রতিটি জাতির জন্য অভিশাপ জানা সত্ত্বেও আমাদের দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। কারণ মানুষের ইচ্ছে থাকার পরেও কাজের সুযোগ না পাওয়ায় মেধা ও সামর্থ্যরে অপচয় ঘটে। বেকারত্ব তরুণ সমাজের মধ্যে ভয়াবহ হতাশা তৈরি করে। এতে একদিকে তারুণ্যের অপচয় ঘটে, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। ফলে বেকারত্ব অসংখ্য সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয়। তবে বেকারত্বের পেছনে দায়ী কে বা কী? খুব সাধারণীকরণের মাধ্যমে হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাবে না। তাই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আদৌ বেকারত্ব দূরীকরণে কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে, সে ব্যাপারে এখনই ভাবতে হবে এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গতানুগতিক কর্মমুখী, কারিগরি শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরি বলে মনে করি। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ থেকে বেকারত্ব দূর করা স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ এবং অর্থনৈতিক কাঠামোগত পরিবর্তনে। প্রয়োজনে কর্মমুখী শিক্ষাবিস্তার, কুটিরশিল্পের প্রসারসহ আত্মকর্মসংস্থান মূলক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন। উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। দেশের তরুণদের উৎসাহিত করতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সরকারিভাবে ঋনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে বৃত্তিমূলক, কারিগরি ও কৃষিশিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের জন্য সার, বীজ, যন্ত্রাংশ, কীটনাশক প্রভৃতির বাজার সম্প্রসারণ; হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুপালন, মাছ চাষ, বনায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প এবং বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষুদ্র শিল্প এবং বিভিন্ন প্রচলিত-অপ্রচলিত খাতে মহিলা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে বেকার সমস্যা একক কোনো সমস্যা নয় বরং বহুবিধ সমস্যার জনক। এ সমস্যা ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি সদিচ্ছা যেমন জরুরি, তেমনি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বেরও প্রয়োজন। বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিক্ষিত ও পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন ধরনের কাজে উৎসাহী করে তুলতে পারলেই বেকারত্বের বিশাল বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করেও বেকার সমস্যার সমাধান করা যাবে বলে আশা করছি।