
বরিশাল সদর প্রতিনিধি:
বরিশালে নির্ধারিত সময়ের এক দিন পর টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হলেও ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) জটিলতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র সুবিধাভোগীরা। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে এই সমস্যা দেখা গেছে। অধিকাংশ সুবিধাভোগী দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ওটিপি না পাওয়ায় পণ্য না নিয়েই বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। একই সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন ডিলাররাও।
বরিশাল নগরীতে ৯০ হাজার ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে বর্তমানে ৩১ হাজার ২৭৪টি কার্ডের মাধ্যমে সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে পণ্য বিতরণ নিশ্চিত করতে নতুন মালিকানা যাচাইয়ে ওটিপি ব্যবহারের নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে টিসিবির অ্যাপে কার্ড স্ক্যান করার পরও দুই-তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ওটিপি না আসায় সুবিধাভোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
টিসিবির পণ্য নিতে আসা এক সুবিধাভোগী জানান, “সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, স্মার্ট কার্ড স্ক্যান করা হয়েছে, কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মোবাইলে ওটিপি আসেনি। ফলে আমি পণ্য নিতে পারিনি।”
৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আরিফুর রহমান বলেন, “সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাত্র ৩৯ জনের হাতে পণ্য তুলে দিতে পেরেছি, অথচ আমার আওতায় ২৮৮টি কার্ডধারী রয়েছেন। ওটিপি না আসায় অধিকাংশ সুবিধাভোগীকে পণ্য দিতে পারিনি।”
২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাস্টার ফুড প্রোডাক্টসের এক কর্মচারী জানান, "২৪৭ জন কার্ডধারীর মধ্যে পুরো দিনে মাত্র ২৯ জনকে পণ্য দিতে পেরেছি। বাকিরা এসেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে খালি হাতে ফিরে গেছেন।"
টিসিবির ডিলাররা জানান, ওটিপি না আসার কারণে পণ্য বিক্রির গতি অত্যন্ত শ্লথ হয়ে গেছে। একেকজন ক্রেতার জন্য ওটিপি পেতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগছে, ফলে দৈনিক নির্ধারিত সংখ্যক সুবিধাভোগীকে পণ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
একজন ডিলার বলেন, “আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য বিতরণ করছি, কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এভাবে চললে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য বিক্রি সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শতদল মণ্ডল বলেন, “অনেকের বাটন মোবাইলের ইনবক্স ভর্তি থাকায় নতুন মেসেজ ঢুকছে না। কিছু নম্বরে ওটিপি আসতে দেরি হচ্ছে। তবে যারা পণ্য পাননি, তারা দু-এক দিন পর নিলেও কোনো সমস্যা নেই। পণ্য বেহাত হওয়ার আশঙ্কা নেই, কারণ পরবর্তী বরাদ্দ না আসা পর্যন্ত সুবিধাভোগীরা তাদের বরাদ্দকৃত পণ্য নিতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই সাময়িক সমস্যার জন্য আমরা দুঃখিত। তবে সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে, যাতে পরবর্তী সময়ে এমন পরিস্থিতি না হয়।”
প্রসঙ্গত, বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৯০ হাজার ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ভুল তথ্য প্রদান, একাধিক কার্ডে একই মোবাইল নম্বর ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে অধিকাংশ কার্ড বাতিল করা হয়।
বর্তমানে যাচাই-বাছাই শেষে ৩১ হাজার ২৭৪টি কার্ডের মাধ্যমে দরিদ্র সুবিধাভোগীদের জন্য টিসিবি পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি কার্ডধারী ৫৪০ টাকায় ৫ কেজি চাল, ২ লিটার তেল, ২ কেজি ডাল ও ১ কেজি চিনি পাচ্ছেন। তবে ওটিপি সংক্রান্ত জটিলতা সমাধান না হলে দরিদ্র সুবিধাভোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।