
বরিশাল সদর প্রতিনিধি:
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলেও নিয়মিতভাবে পানির বিল আদায় করছে। এমনকি যেসব এলাকায় পানির লাইন স্থাপন করা হয়নি, সেখান থেকেও নিয়মিত বিল নেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এটিকে বিধি সম্মত বলে দাবি করলেও এ সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ ভুক্তভোগীরা।
সিটি কর্পোরেশনের ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে মাত্র ৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানির সংযোগ রয়েছে। তবুও পুরো এলাকাজুড়ে পানি বিল বা "রেট" ধার্য করা হচ্ছে। ৩৪ হাজার পানির লাইনের নামে বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে। অনেক এলাকায় পানির লাইন থাকলেও পানির একফোঁটা দেখা যায় না।
যেসব এলাকায় পানির লাইন নেই, সেখানে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হলেও সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে বাসিন্দারা টিউবওয়েল বসিয়ে নিজের পানির চাহিদা পূরণ করছেন। কিন্তু সেখানেও বিসিসি ৩৫ হাজার টাকা চার্জ ধার্য করছে। এক ভুক্তভোগী বলেন, "পানি পাই না, নিজের টিউবওয়েল বসাতে চাইলে বিসিসিকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এর চেয়ে গ্রামে থাকাই ভালো ছিল।"
আরেকজন বলেন, "আমার কাছে বিসিসি পানির লাইন বাবদ ১৫-১৬ হাজার টাকা চাইছে। আমি বলেছি, পানি না পেলে কোনো টাকা দেবো না। যত জরিমানাই দিক, আগে পানি দিতে হবে।"
বিসিসি এলাকার প্রতিদিনের পানির চাহিদা ৭ কোটি লিটার হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র সাড়ে ৩ কোটি লিটার। ৫টি ওভারহেড ট্যাংক, ৩৬টি পাম্প এবং কিছু পানিবাহী গাড়ির সাহায্যে এই পানি সরবরাহ করা হয়। ফলে পানির অভাবে নগরজুড়ে প্রায় ২৮ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন করেছে বাসিন্দারা। বিসিসির হিসাব অনুযায়ী, পুরো চাহিদা পূরণে অন্তত ১০টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প প্রয়োজন।
পানি বিভাগের কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, "আমরা চাহিদার তুলনায় অর্ধেক পানি সরবরাহ করতে পারি। নতুন ১০টি উৎপাদনমুখী টিউবওয়েল পেলে পানির সংকট অনেকটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।"
বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, "বিসিসি এলাকায় কোনো মাধ্যম থেকে পানি নেয়া হোক না কেন, তার জন্য কর দিতে হবে। ভবনের নকশা পাশ হলেই পানি রেট ধার্য হয়, এমনকি টিউবওয়েল বসানোর ক্ষেত্রেও কর দিতে হয়। পানির লাইন থাকুক বা না থাকুক, এটি আমাদের বিধি অনুযায়ী সঠিক।"
তবে ভুক্তভোগী জনগণের দাবি, পানির সরবরাহ নিশ্চিত না করে বিল আদায় করা সম্পূর্ণ অন্যায়। তারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।