
দাউদুল ইসলাম নয়ন:
বসন্তের শুরুতেই রাজধানীতে বেড়ে গিয়েছিল তাপমাত্রা, তবে গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হঠাৎ নেমে আসা মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি নগরবাসীর জন্য সাময়িক স্বস্তি বয়ে এনেছে। শহরের উত্তাপ কমে আসায় মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পেরেছে, আর দীর্ঘদিনের জমে থাকা ধুলাবালি ধুয়ে যাওয়ায় বাতাস কিছুটা নির্মল হয়েছে। তবে নগরীর এই সাময়িক স্বস্তি রাস্তায় চরম দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে পথচারী ও যানবাহন চালকদের জন্য।
রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত শহরগুলোর মধ্যে একটি। বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, শুষ্ক মৌসুমে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, অ্যাজমা ও অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধুলাবালি মানুষের ফুসফুসে প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন বৃষ্টি নামার পর, কারণ এতে ধুলাবালির পরিমাণ কিছুটা কমে আসে।
কিন্তু এই সাময়িক স্বস্তি নগরীর রাস্তা ও মহাসড়কে ভয়াবহ ভোগান্তি তৈরি করেছে। দীর্ঘদিনের জমে থাকা ধুলাবালি, বালু ও মাটি বৃষ্টির পানিতে মিশে কাদায় পরিণত হয়েছে। ফলে রাজধানীর অনেক রাস্তাই পিচ্ছিল হয়ে গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে যেখানে ইটভাটা, নির্মাণকাজ ও ভূমি ভরাটের কাজ চলছে, সেখানে প্রতিনিয়ত ট্রাক ও ডাম্পার চলাচল করে। এসব যানবাহন রাস্তার উপর মাটি ও বালি ফেলায় রাস্তার উপর স্তর পড়ে যায়। শুকনো আবহাওয়ায় এগুলো ধুলায় পরিণত হলেও, বৃষ্টির পানি লাগলে তা কাদায় রূপ নেয়।
বিশেষ করে, রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, এবং শ্যামলীর কিছু এলাকায় বৃষ্টির পর রাস্তাগুলো ভয়াবহ পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। সেখানে পথচারীরা চলাফেরা করতে সমস্যায় পড়েন, আর মোটরসাইকেলসহ হালকা যানবাহনের জন্য পরিস্থিতি হয়ে ওঠে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
যানবাহন চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক। বৃষ্টির পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। রাস্তায় পড়ে গিয়ে অনেক চালক আহত হয়েছেন, কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় এই সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বৃষ্টিতে চট্রগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা-সাভার মহাসড়ক এবং টঙ্গী, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বাইরে সাভার ও আশুলিয়ার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। চন্দ্রা মহাসড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলার কারণে সড়কের প্রশস্ততা কমে গেছে। রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত দখল করে চলছে অবৈধ ব্যবসা। ফলে পথচারীদের বাধ্য হয়ে মূল সড়ক দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টির পর এই সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়েছে। রাস্তায় পানি জমে গিয়ে কাদায় পরিণত হয়েছে, ফলে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফুটপাত না থাকায় এবং রাস্তার একপাশে বিভিন্ন দোকানপাট বসে যাওয়ায় পথচারীরা গাদাগাদি করে চলতে বাধ্য হচ্ছেন।
নগরবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এবং সড়ক পরিষ্কারের প্রতি অবহেলা দেখানোর কারণে বৃষ্টি আসলেই এই দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। প্রতিটি সড়কেই নিয়মিতভাবে ধুলাবালি পরিষ্কার করা উচিত ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যদি নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার করত এবং নির্মাণকাজের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নির্ধারণ করত, তাহলে এ ধরনের সমস্যা হতো না।
তারা আরও বলছেন, ঢাকার মতো ব্যস্ত নগরীতে বৃষ্টি হলে রাস্তার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেন সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা ও কাদা জমে না যায়।
নগরবাসী দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চান। তাদের মতে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে, রাস্তা থেকে জমে থাকা মাটি ও বালু সরিয়ে ফেলতে হবে এবং যেখানে যেখানে রাস্তা খারাপ হয়েছে, সেখানে দ্রুত সংস্কার কাজ করতে হবে।
বৃষ্টি হলে স্বস্তির বদলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। তাই নগর ব্যবস্থাপনার উন্নতি ও সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে না পড়ে।