
মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মুন্সী ইয়াছিন আলী সোহেলকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় শাখা। ২৭ এপ্রিল রবিবার ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত একটি পত্রে এ বহিষ্কার আদেশ দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির।
এর আগে ২৩ এপ্রিল একটি বিজ্ঞপ্তিতে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির হয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এর দুদিন পর বহিষ্কার আদেশ দিয়ে বহিষ্কৃত শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মুন্সী ইয়াছিন আলী সোহেলের সাথে সাংগঠনিক সকল কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
তার আগে ছাত্রদল এই নেতার বিরুদ্ধে এক শিক্ষককে অপহরণ ও জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের গুরুতর অভিযোগ উঠে। এঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক ফয়জুর রহমান ১৮ এপ্রিল ২০২৫ মাগুরার শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: ১২)। ঐ মামলায় মুন্সী ইয়াছিন আলী সোহেল ছাড়াও আরো ৪জনকে আসামী করা হয়। তারা হলেন সোহেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আলামিন, রাজ্জাক, শুকুর ও লিপ্টন।
মামলার বাদী ও তার পরিবার জানায়, ৫ আগস্টের পর ছাত্রদল নেতা সোহেল মুন্সীর নেতৃত্বে চরকচুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি শুরু হয়। সে সময় ওই গ্রামে তারই প্রতিবেশী আন্নু মোল্যা নামে দরিদ্র পরিবারের এক যুবকের কাছে তারা চাঁদা দাবি করে। রেহাই পেতে আন্নু মোল্যা স্থানীয় এক সুদে কারবারির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষক ফয়জুর প্রতিবাদ করায় তারা নাখোশ হয়। ওই ঘটনার পর থেকে নানাভাবে ওই শিক্ষককে হয়রানি করা হচ্ছে। একদিন শ্রীপুর বাজারে গেলে জোরপূর্বক তাকে বাজার থেকে বের করেও দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষকের স্ত্রী শামীম লাকনুর বলেন, ৭ এপ্রিল বিকালে সোহেল মুন্সী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার স্বামীকে শ্রীপুর মহিলা কলেজ পাড়ার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সেখানে তার হাত-মুখ বেঁধে নির্যাতন চালায়। আমার স্বামী একজন সম্মানীয় মানুষ। অথচ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মেয়েলি অভিযোগ তুলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে তারা ১ লাখ টাকা নিয়েছে। আরও ২ লাখ টাকা আদায় করতে তারা একটি ব্যাংক চেক নিয়ে যায়। ওই দুই লাখ টাকার জন্য সোহেল মুন্সী তার ঘনিষ্ঠ আল আমিন, রাজ্জাকসহ কয়েকজনকে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বারংবার চাপ প্রয়োগ করছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক ফয়জুর রহমান বলেন, ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও চাহিদা অনুযায়ী আরও ২ লাখ টাকা না দিয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় তারা আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছে। তাদের ভয়ে এখন বাড়িতে থাকতে পারছি না। বাইরে নিরাপত্তা নেই। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো প্রতিকার পাইনি। উপরন্তু তাদের ভয়ে স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সোহেল মুন্সী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার সঙ্গে চলাফেরা করে এমন কয়েকজন ওই শিক্ষকের কাছ থেকে কিছু টাকা এবং চেক আদায় করেছে বলে জানতে পেরেছি। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।