শরীয়তপুর: রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালাম আজাদের দাফন তার বাবার কবরের পাশেই শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন পৌর কবরস্থানে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টায় সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের মোক্তারের চর পূর্বপোড়াগাছা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে সকাল ৯টায় নিহতের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার দিবাগত রাত ২টায় আজাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানী ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টায় তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং তার স্মৃতিচারণ করে আহাজারি করতে থাকেন। তাদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিহত আবুল কালাম আজাদের মরদেহ একনজর দেখার জন্য সকাল থেকেই তার বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভিড় করেন।
নিহত আবুল কালামের ভাবী আসমা বেগমের সাথে রোববার বেলা ১১টায় তার শেষ কথা হয়। তিনি খুব শীঘ্রই বাড়ি ফিরে সকলের সাথে দেখা করার কথা বলেছিলেন। তবে সেই বাড়ি ফেরা হলো লাশ হয়ে। চার ভাইয়ের মধ্যে আবুল কালাম ছিলেন সবার ছোট। স্ত্রী ও দুই শিশু সস্তান নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জের পাঠানতলি এলাকায় বসবাস করতেন এবং ঢাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন।
নিহতের বড় ভাই খোকন চোকদার বলেন, “আমার উপার্জনক্ষম নিরপরাধ ভাইটি যাদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য মর্মান্তিক ভাবে মারা গেছেন, আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার চাই।” নিহত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী প্রিয়া আক্তার আহাজারি করে বলেন, "আমার সন্তানরা কাকে বাবা বলে ডাকবে, কাকে বলবে বাবা তুমি আসো। আমার মানিকেরা তো এখন ও বোঝে না যে ওদের বাবা আর নাই। ওরা তো মনে করছে বাবা ঠিকই মজা নিয়ে আসবে। এ অবুঝ বাচ্চাদের পাশে কে দাঁড়াবে?"
নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকি দাস বলেন, “এ দুর্ঘটনার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। সরকারের উচ্চমহল এ বিষয়ে পরিবারের জন্য সকল ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের জেলা প্রশাসনও এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা করবে।”
জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইমরুল হাসান বলেন, “এ বিষয়টি সম্পর্কে উপদেষ্টা মহোদয় অবগত আছেন। এই পরিবার ঢাকায় গেলে তাদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে ভালো একটি এমাউন্ট সাহায্য করা হবে। অনাকাঙ্খিত মৃত্যু কারো জন্য কাম্য নয়, আমরা প্রশাসন, পরিবার এবং সরকারের পক্ষ থেকে এটার জন্য ব্যথিত। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে নিহতের পরিবারের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবো।”