
সরিষাবাড়ি প্রতিনিধি, জামালপুর:
জামালপুরের সরিষাবাড়ির এক সময়ের খরস্রোতা সুবর্ণাখালী নদী এখন এক মরা খালে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ নদী জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার চম্পাকলি সিনেমা হল হয়ে পিংনা ইউনিয়ন ও টাঙ্গাইলের গোপালপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান হলেও দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে নদীর নাম ও ঐতিহ্য।
ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের প্রবল ভূমিকম্প ও বন্যার কারণে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ঝিনাই খাল থেকে ব্রহ্মপুত্রের নিম্নপ্রবাহ যমুনা নদীর উৎপত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত সুবর্ণাখালীই ছিল জামালপুরের প্রধান নদী। একসময় এ নদীটি ছিল প্রবাহমান। নদীর বুকে অসংখ্য পাল তোলা নৌকা পণ্যবোঝাই করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করতো। এ নদীপথই ছিল মানুষেরও যাতায়াতের প্রথম মাধ্যম। কিন্তু এখন আর সে দৃশ্য নেই। তবে এখন তা অবৈধ দখল, পলি জমা ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভরা যৌবন হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে স্থানীয় একদল প্রভাবশালীরা জলাধার সংরক্ষণ আইন অমান্য করে নদীর বুকে বিভিন্ন পাকা স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এমনকি স্থানীয় ক্লিনিক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা-আবর্জনা ফেলেও দূষিত করা হচ্ছে নদীর পানি।
স্থানীয়দের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাত্তার উদ্দিন বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শুধু দেশকেই স্বাধীন করতে পেরেছি, দেশের সম্পদকে নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল বসার বলেন, আমগোর কী আর ক্ষমতা আছে যে, আমাগোর কথায় নদী দখল বন্ধ অইব। আমরা অনেকদিন ধইরা ওই পৌরসভার মেয়র আর উপজেলা চেয়ারম্যান এর কাছে অভিযোগপত্র জমা দিছি। কিন্তু কী আর করার? লাভ নাই।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, আপনেগো মতো কতো সাংবাদিকরা আইলো গেলো! কিন্তু সবাই ওই পৌরসভা পর্যন্ত গিয়া ঠেইকা পড়ে।
সরিষাবাড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন পাঠান বলেন, সুবর্ণাখালি নদীর দূষণ ও দখলের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। যেন নদীটি অতিসত্ত্বর অতীতের রূপ-যৌবন ফিরে পায়।
বিষয়টি নিয়ে জামালপুর জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় বলেন, সুবর্ণাখালী নদী দখল ও দূষণের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। পর্যবেক্ষণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।