
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
শীতপ্রধান দেশ থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ রামরাই দীঘিতে রং-বেরঙের নানা প্রজাতির অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত এখন পুকুর প্রাঙ্গণ। শীত মৌসুমে লাখো মাইল পাড়ি দিয়ে ভালোবাসার টানে এই দীঘিতে আসে এসব পাখি। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব পাখি ও জলাশয়ের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে।
এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আকর্ষণীয় তাদের খুনসুটি। প্রতিবছর শীত এলেই অতিথি পাখির আগমনে প্রকৃতি যেন নতুন সাজে সেজে ওঠে। পাখিদের মুহুর্মুহু ডাক আর কলতানে পুরো এলাকা রূপ নিয়েছে পাখির স্বর্গরাজ্যে।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে এখানে। এসব পাখিদের দেখতে প্রতিদিনই পাখি প্রেমী ও সৌন্দর্য পিপাসুরা দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।
প্রচণ্ড শীতের কারণে সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে আসা এসব পাখি সারাদিন রামরাই দীঘি বা রাণীসাগরে আহার করে। সন্ধ্যায় আশপাশের জলাশয়ে আশ্রয় নেয় এবং সকালে আবার দীঘিতে ফিরে আসে।
উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৪ কিমি দূরে উত্তরগাঁও গ্রামের নিকট বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাশয় রামরাই দীঘির অবস্থান। শহর থেকে যে কোনো যানবাহনে মাত্র ১০-১৫ টাকা ভাড়ায় ১৫-২০ মিনিটে পৌঁছানো যায়। পুকুরটির মোট আয়তন ৪২.২০ একর। এর মধ্যে ১৮.৩৪ একর সু-উচ্চ পাড় এবং ২৩.৮২ একর জলভাগ। দীঘির সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও এটি ৫০০ থেকে ১০০০ বছরের পুরোনো হতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির শুরুর দিকে উত্তর মরু, ইউরোপ, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, হিমালয়ের পাদদেশ এবং তিব্বত অঞ্চল থেকে পাখিরা এখানে আসে। তাদের মধ্যে সাদা বক, বালিয়া, পানকৌড়ি, ঘুঘু, সারস, গাংচিল, পাতিহাঁস, বুনোহাঁস, খঞ্জনা, ওয়ার্বলার, হাড়গিলা, স্নাইপ বা কাদাখাঁচা, এবং কোকিল উল্লেখযোগ্য।
সন্ধ্যা নামলে অতিথি পাখিরা দীঘি পাড়ের লিচু বাগানে আশ্রয় নেয়। আবার ভোর হলে ফিরে আসে দীঘিতে। মার্চের শেষের দিকে এরা নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়।
উপজেলা পরিষদ রামরাই দীঘিকে নান্দনিক রূপ দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাড়ের চারদিকে ১২০০ লিচু গাছ, দর্শনার্থীদের বসার জন্য ছাতার আকৃতির তিনটি ছাউনি এবং পাঁচটি বসার মাচা। এছাড়াও দীঘির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য একটি নৌকা এবং কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
রামরাই দীঘি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে এটি দেশের পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দিনাজপুরের সেলিনা বেগম বলেন, “শুনেছিলাম রাণীসাগরে অনেক পাখি আসে। তাই দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে মনটা ভরে গেল। পুকুরের চারপাশের শত শত লিচু গাছ মনোরম।”
স্থানীয় পাখি প্রেমিক শেখ মেহেদী ও শহীদুল ইসলাম রকি জানান, “রামরাই দীঘি এলাকাটি নির্জন হওয়ায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশি পাখি ছাড়াও প্রচুর অতিথি পাখি এসেছে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, “রামরাই দীঘি রাণীশংকৈলের জন্য গৌরবের। এটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”