
রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরকে আলু উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা বলা হয়। এবার এই জেলায় চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর গাছে এবার তেমন বড় ধরনের রোগের কবলে পড়েনি। ইতোমধ্যেই জেলার অনেক স্থানে আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছে কৃষক। ভালো ফলনের সাথে লাভের অংকে দাম পাওয়ায় বেশ খুশিও চাষিরা।
রংপুর কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরে রয়েছে আগাম জাতের আলু চাষ। সব মিলে এবার জেলায় এসব জমি থেকে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।
গতকাল পীরগাছা উপজেলার পাওটানা ও কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া তালুক শাহাবাজসহ তিস্তার চর বেষ্টিত কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আগাম আলু তুলতে শুরু করে ফসলের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক কৃষাণিরা। এসব এলাকা ছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গঙ্গাচড়া এলাকার নোহালী ও তিস্তার চর এবং মিঠাপুকুর উপজেলার অনেক এলাকায় আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছে কৃষকরা।
কাউনিয়ার উপজেলার তালুক শাহাবাজ চরবেস্টিত এলাকায় আলু তুলতে কথা হয় কৃষক রমজানের সাথে। রমজান জানান, সার ও সেচে গতবারের তুলনায় খরচ বেশি হলেও এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর পচারি (ব্লাইড) রোগ দমনে খরচ তেমন হয়নি। নিজ জমিতে প্রায় ২৫-৩০ জন কৃষক কৃষাণি দিয়ে আলু তুলতে তুলতে রমজান আরও বলেন, গতবারের চেয়ে এবার একটু ফলন ভালো হয়েছে। তবে এবার জমিতেই দামের অংকে ভালো লাভের আশাও প্রকাশ করলেন এই কৃষক। জমিতে আলু বিক্রি করছেন ১৭ টাকা কেজি দরে। যাতে তার একরে খরচ বাদে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ থাকার কথা রয়েছে বলেও জানান কৃষক রমজান আলী।
রমজানের মতো পাওটানা এলাকার কৃষক আনোয়ারুলও ৪০ শতাংশ জমিতে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আনোয়ারুল বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে। গতবারের এই সময়ের চেয়ে এবার কেজিতে ৩-৪ টাকা বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে জমিতে আলু বিক্রি করে আমরা লাভের মুখ দেখছি। তবে এই বাজার কমে যাওয়ার শঙ্কার কথা জানান এই কৃষক।
পীরগাছা উপজেলার পারুল এলাকার আলু ব্যবসায়ী জিল্লাল জানান, এবার আলুর দাম এখন পর্যন্ত ভালো আছে। এই বাজার থাকলে কৃষক লাভবান হবেন। তবে সবেমাত্র আলু উঠতে শুরু করেছে। পুরোদমে আলু উঠতে আরও এক মাস সময় লাগবে। সেই সময় পর্যন্ত দাম ভালো নাও থাকতে পারে বলেও শঙ্কার কথাও জানান তিনি।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান জানান, এবার চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যাতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ মেট্রিকটন। আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। বাকিগুলো বয়স সময়ভেদে ৬০-৭০ দিন হয়েছে।
ফলনের বিষয়ে তিনি আরও জানান, এবার আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আলু আবাদের জন্য অনুকূলে রয়েছে। এই আবহাওয়ার ধারাবাহিকতা থাকলে আশা করা যায় লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রতি হেক্টরে ৩ থেকে ৪ মেট্রিকটন আলু বেশি উৎপাদন হবে।