
জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় সবসময়ই প্রাণবন্ত। তবে রমজান এলে এই প্রাণচাঞ্চল্যে যোগ হয় এক ভিন্ন মাত্রা। পড়াশোনার ব্যস্ততার পাশাপাশি সেহরি, ইফতার ও তারাবিহকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসে তৈরি হয় এক অনন্য পরিবেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ হলগুলোর মসজিদে শিক্ষার্থীরা জামাতে নামাজ আদায় করেন। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় মসজিদ ও নতুন ১০ তলা বিশিষ্ট তিনটি হলের মসজিদে তারাবিহ নামাজে শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য ভিড় দেখা যায়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে উদ্ভাসিত এই সময়টাকে উপভোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইহসান আহমেদ বলেন, “বাসা থেকে বাইরে এবারই প্রথম রমজান কাটাচ্ছি। হলে থেকে ইফতার ও সেহরির খাবার নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম, তবে বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে এসব আয়োজন পরিবারের অভাব দূর করছে। তারাবির নামাজ একসঙ্গে পড়াটাও দারুণ লাগছে।”
আসরের নামাজের পর থেকেই ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, ডেইরি গেট, প্রান্তিক গেট, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দোকান ও হল ক্যান্টিনগুলোতে ইফতার বিক্রি শুরু হয়। টিএসসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল ফিল্ডে শিক্ষার্থীদের একত্রে ইফতার করতে দেখা যায়। একই হল, জেলা, ব্যাচ, বিভাগ ও ক্লাবের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে ইফতার আয়োজন করে থাকেন, যা ক্যাম্পাসের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।
রাত গভীর হলে শিক্ষার্থীরা সেহরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। রাত ৩টার পর থেকে হলের ক্যান্টিন ও ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। তবে প্রশাসন থেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে খাবার বিক্রি করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
এক হোটেল মালিক ইব্রাহিম বলেন, “রমজানে আমাদের কাজের সময় বেড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা সেহরির জন্য আসেন, তাই আগেভাগেই দোকান খোলা রেখে রান্না শুরু করতে হয়। তবে শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে পারা আমাদের জন্য আনন্দের।”
সাধারণত ব্যস্ত ক্যাম্পাস রমজানের রাতে হয়ে ওঠে স্নিগ্ধ ও নীরব। আলো-আঁধারির মিশেলে তৈরি হয় এক অনন্য আধ্যাত্মিক পরিবেশ। এবারের অভিজ্ঞতা নিয়ে জানতে চাইলে মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসিন আহমেদ বলেন, “রমজানে ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় দিনের বেলা রোজা রেখে, রাতে অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে পড়াশোনায় মনোযোগ রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবুও, এই সময়টা আত্মশুদ্ধির এক সুযোগ। সারাবছর ব্যস্ততার মাঝে ইবাদতের সময় না পেলেও রমজান সে সুযোগ করে দেয়। তাই পড়াশোনা ও ইবাদতের মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছি।”
এভাবেই সেহরি, ইফতার, ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির অভিজ্ঞতায় শিক্ষার্থীদের কাছে রমজানের দিন ও রাতগুলো হয়ে ওঠে স্মরণীয়।