
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ এলাকায় শনিবার দিনভর সংঘর্ষ ও উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তের দুই পাশের কৃষকদের মধ্যে শুরু হওয়া বিবাদ পরিণত হয় বড় আকারের সংঘর্ষে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।
এই ঘটনায় অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের মতে, সীমান্ত এলাকায় এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
শনিবার সকাল থেকে গ্রিন লাইনের ওপারে বাংলাদেশি কৃষকদের ঘাস কাটতে যাওয়া নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। ভারতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ঘাস কাটার আড়ালে বাংলাদেশের কয়েকজন কৃষক গম ক্ষেত থেকে ফসল চুরি করেছেন।
বিজিবি রাজশাহী সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ জানিয়েছেন, বিষয়টি "খুবই মাইনর" ছিল। তবে ভারতীয় কৃষকরা বিষয়টিকে বড় করে তোলে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ভারতীয় কৃষকেরা প্রথমে বাংলাদেশি কৃষকদের ওপর হামলা চালায় এবং গাছ ও ফসল নষ্ট করতে থাকে।
বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফসল চুরির অভিযোগের ভিত্তিতে দুই দেশের কৃষকদের মধ্যে বিবাদ হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএসএফ বাংলাদেশি কৃষকদের ওপর পাথর ছোড়া ও ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় কৃষকেরা সরাসরি বাংলাদেশি কৃষকদের ফসল নষ্ট করার চেষ্টা করে। তারা আমগাছ, সরিষার ক্ষেত, এবং ভুট্টার জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিজিবি অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, "ভারতীয়রা বাংলাদেশে প্রবেশ করে গাছ কাটার চেষ্টা করে। আমরা বাধা দিলে তারা পাথর ছুড়ে এবং ককটেল ছোড়ে। বিএসএফ পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলো।"
বিকেল চারটার দিকে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষের সীমান্তরক্ষী বাহিনী দুই দেশের জনগণকে সীমান্ত থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ জানিয়েছেন, "আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেছি। স্থানীয় লোকজনকে সরাতে আমাদের দীর্ঘ সময় লেগেছে।"
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে উত্তেজনা নতুন নয়। গত কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় ভারতীয় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা চলছে। কয়েকদিন আগেও শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে এমন উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।
৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, নিয়ম অনুযায়ী সীমান্ত লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো নির্মাণকাজ শুরু করার আগে উভয় পক্ষকে অবহিত করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিএসএফ সেই নিয়ম মানেনি।
এই সংঘর্ষে বাংলাদেশি পাঁচজন আহত হয়েছেন। তবে বিএসএফ জানিয়েছে, তাদের কোনো সদস্য আহত হয়নি। ফসল ও গাছ নষ্ট হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও স্থানীয়রা এখনও আতঙ্কিত। বিজিবি সীমান্তে বাড়তি সদস্য মোতায়েন করেছে এবং সীমান্ত পরিস্থিতি নজরদারি করছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ সীমান্তে ঘটনার সূত্রপাত ছোট একটি বিষয়ে হলেও তা দ্রুত বড় আকার ধারণ করে। সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনার এই ধারা বন্ধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।