
প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছেই। এই দুর্ঘটনায় প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ, ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমান সময়ের আলোচিত ও মর্মস্পর্শী ঘটনা। বর্তমানে দেশবাসীর নিরাপত্তার প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। অনেকেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে আবার কেউ বা পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এতে একমাত্র কর্মক্ষম হওয়ায় অনেকের পরিবার দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। সড়ক দুর্ঘটনা সাধারণত বেশ কিছু কারণে হয়ে থাকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতি-সীমা। অসাবধানতার সঙ্গে অতিরিক্ত গতিতে অন্য একটি চলমান গাড়িকে ওভারটেকের চেষ্টাই সড়ক দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ। এর পাশাপাশি দেশের রাস্তাগুলো অপ্রশস্ত ব্যবস্থাও বাংলাদেশের অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে আইন অমান্য করে গাড়ী চালানো। এক জরিপে দেখা গেছে ৯১ শতাংশ চালক জেব্রা ক্রসিংয়ে অবস্থানরত পথচারীদের অধিকার আমলেই নেয় না। অপরদিকে ৮৪ ভাগ পথচারীও নিয়ম ভেঙে রাস্তা পার হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৪ ভাগ রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়মের প্রাথমিক বিষয়গুলো জানে না। জানে না কোথায় কিভাবে মোড় নিতে হবে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে সড়ক পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ হাজার কিলোমিটার। এসব সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল করছে। কেবল ঢাকায় বাস মিনিবাস, প্রাইভেটকার, জিপ, পিক-আপ, ট্রাক, অটোরিকশা ও মটর সাইকেল মিলিয়ে কয়েক লক্ষ যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও বৈধ-অবৈধ রিকশার সংখ্যা কত লক্ষ তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু এই বিশাল যানবাহন সুশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে আনার মতো ট্রাফিক ব্যবস্থা এদেশে আজও গড়ে উঠেনি। দেশে মহাসড়কসহ অন্যান্য সড়কে নিহতের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ১২-২০ হাজার জন। সম্প্রতি এক জরিপে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫% থেকে ৩০% শয্যায় দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদের ভর্তি করতে হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে অপ্রত্যাশিত চাপ। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে চালক, আইন-সৃঙ্খলা বাহিনী ও পথচারীদের সকলকে সচেতন হতে হবে। ট্রাফিক আইন যদি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং আইন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে যদি কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। সেই সাথে অবৈধ উপায়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান করা বন্ধ করে গাড়ির চলাচল কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। মানুষের জান মাল নিরাপত্তার স্বার্থে খুব দ্রুত সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।