
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় শুরু হয়েছে বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই। ধানের ফলন ভালো হলেও বিক্রিতে দাম নিয়ে শংকায় পরেছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, শুরুতে দাম ভালো থাকলেও ভরপুর কাটা-মাড়াইয়ের সময় দরপতন ঘটে। ফলে লোকসানে পড়তে হয় কৃষকদের।
এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে জমির ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেলে কেটে ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। আত্রাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলা জুড়ে ১৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে হাইব্রিড ও উপাসি জাতের ধান রয়েছে। এতে ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৬ হাজার ৬৫ মেট্রিক টন।
সূত্র মতে, এবার ধান আবাদে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তেমন একটা রোগ বালাই দেখা দেয়নি। ফলে ধান কাটা হয়েছে। তবে কোনোরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আসা করছেন এই দপ্তরের কর্মকর্তা। ইতি মধ্যে আগাম জাতের জিরাশাইল ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা বলছেন.ধান আবাদে সুষ্ঠু পরিচর্যায় খুব সুন্দর হয়েছে। বর্তমানে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ২২ থেকে প্রায় ২৪ মন হারে ধানের ফলন হচ্ছে।
কৃষকদের মতে, অঞ্চল ও মাটির প্রকার ভেদে এক বিঘা জমিতে ধান চাষে রোপণ থেকে শুরু করে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত ১৭হাজার থেকে প্রায় ২১হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।তবে বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে জমির ভাড়াসহ সর্বোচ্চ প্রায় ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারা বলছেন, ডিজেল তেল, রাসায়নিক সার, বিদ্যুতের দাম, কীটনাশক এবং শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে এবার খরচ বেশি হয়েছে।
উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নের মস্কিপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই মৌসুমে প্রায় ৭০বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি। ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২২/২৩মন হারে ফলন হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রতিমন ধান ১হাজার ৩৫০টাকা দরে বিক্রি করেছি।
একই গ্রামের কৃষক রিপন বলেন, তিনি এবার ৮০বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। এসব ধান ঘরে তুলতে ৫৪জন শ্রমিক দিয়ে কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। ধানের ফলন আশানুরূপ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
নওদুলি গ্রামের কৃষক জাহের আলী বলেন, এবার তিনি প্রায় ৭বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। এর মধ্যে ৪বিঘা জমি বাৎসরিক প্রতি বিঘা জমি ১২হাজার টাকা হারে বর্গা নেয়া আছে।আর ৫/৭দিন পরেই ধান কাটা শুরু করবেন। তার মতে, ধান কাটার শুরুতে যে দর থাকে সেটা ভরা মৌসুমে প্রতিমন ধানে ৩/৪শত টাকা কমে যায়। ফলে লোকসানে পরতে হয়।
ইসলামগাঁথী গ্রামের কৃষক আলাউদ্দীন বলেন, তিনি ১৪ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছেন। তার মতে, অধিকাংশ কৃষকরা রাসায়নিকসার, কীটনাশক, পানির দাম বাঁকিতে নিয়ে ধার-দেনায় ধান রোপণ করেন। এসব কৃষকরা ধান কেটে ঘরে ধরে রাখতে পারেন না। ভরা মৌসুমে ধানের দাম কম থাকলেও ধান কাটার সাথে সাথে ধার দেনা শোধে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। ফলে লোকসানের কবলে পরেন কৃষকরা।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে ধান চাষে যে খরচ হয়েছে এবং বর্তমানে যে দরে ধান বিক্রি হচ্ছে তাতে কিছুটা হলেও কৃষকরা লাভবান হবেন। কিন্তু ধানের দাম যদি কমে যায় তাহলে লোকসানে পরতে হবে। তাই কৃষকদের লোকসান থেকে রক্ষা করতে বাজার তদারকির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আত্রাই উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা প্রসেনজি’ তালুকদার বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকায় এবার ধান ভাল হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং কৃষকরা সুফলাফলি ধান ঘরে তুলতে পারলে বেশ লাভবান হবেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে জমির ৮০শতাংশ ধান পেকে গেলেই কেটে ঘরে তোলার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।