Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঢাকা / কালিয়াকৈরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেলে খাবার পরিবেশন, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের...

কালিয়াকৈরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেলে খাবার পরিবেশন, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ

July 20, 2022 12:24:14 AM  
কালিয়াকৈরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেলে খাবার পরিবেশন, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মানুষ

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) সংবাদদাতা:
গাজীপুর কালিয়াকৈরে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো অনুমোদন বিহীনভাবে গড়ে উঠেছে খাবার হোটেল ও মিষ্টি দোকান। এসব হোটেল ও মিষ্টির কারখানায় অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তবে এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী।

সরেজমিনে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সদরের সন্নিকটে কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই গোপনে নামে বে-নামে গড়ে উঠেছে দই, ঘি, মিষ্টি, রসমাইল, সন্দেশ তৈরির কারখানা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইসলামিয়া মিষ্টান্ন ভান্ডার, সুমন মিষ্টান্ন ভান্ডার, ভাই ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডার, পলাশ মিষ্টান্ন ভান্ডার, তাপশ মিষ্টান্ন ভান্ডার, আদি ভৃঙ্গরাজ মিষ্টান্ন, বনফুল সুইট মিষ্টান্ন, কালিয়াকৈর বাইপাস এলাকায় আদি টাঙ্গাইল সুইটমিট। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে মিষ্টি জাতীয় পণ্য। কারখানার ভিতরে সর্ব সময় অপরিছন্ন, শ্রমিকরাও থাকেন অপরিষ্কার। তারা খালি গায়ে দুর্গন্ধময় স্থানে খাবার তৈরির সময় গাম ঝড়ে পড়ছে এসব পণ্যে। আরো আকর্ষনীয় করতে দইয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ বিস্কুটের গুড়াও। উত্তরবঙ্গথেকে কম দামে আনা নিন্মমানের সানা দিয়ে তৈরি মিষ্টি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, সন্দেশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, রসমালাই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা। এসব দোকানে ওজনে কম দিয়ে ক্রেতাদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বেশি মোনাফা অর্জন করছেন এসব ব্যবসায়ীরা। এসব খাবারে যেমন পুষ্টির অভাব রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।

অপরদিকে কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মালয়েশিয়া, বিসমিল্লাহ, মুক্তা, রাজধানী, কালিয়াকৈর বাইপাস এলাকায় চাঁদ হোটেল, গোল্ডেন মাইন্ড চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, হোটেল ৭১সহ উপজেলা প্রশাসনের সন্নিকটে আঞ্জুমান, তানভীর, খাঁনসহ বিভিন্ন খাবার হোটেলে রান্না করার জায়গা নোংরা স্যাতস্যাতে দুর্গন্ধযুক্ত। পাশেই অবস্থিত মলমূত্র ত্যাগের জায়গাও। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা-ত্রিমোড়ে চন্দ্রা ফুডপ্লাজা, মামা ভাগ্নে, সকাল সন্ধ্যা হোটেল, সফিপুর বাজারে জমজম রেস্তোরা, বনলতা হোটেল, মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রয়েছে বনলতাসহ বেশ কয়েকটি হোটেল, ফুলবাড়িয়া বাজার, ভান্নারা বাজার, বেনুপুর বাজার, আড়াইগঞ্জ বাজার, জালশুকা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে বে-নামে গড়ে উঠেছে খাবার হোটেল ও মানহীন ফাস্টফুডের দোকান।

সরেজমিনে খাবার হোটেলগুলোতে সব সময় নোংরা পরিবেশ এবং খোলা খাবারের উপড় মাছি উড়তে ও খাবারে মরা মাছি পড়ে থাকতে দেখা যায়। আবার অনেক সময় রান্না করা খাবারেও মরে যাওয়া পোকা পাওয়া যায়। দু-একটা হোটেলে খাবারে ঢাকনা ব্যবহার করলেও অধিকাংশ হোটেলে খাবারে ঢাকনাও ব্যবহার হয় না। নিম্নমানের পচা ও বাসি খাবারও পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এসব হোটেলে ভাত মাংস ভাজিসহ বিভিন্ন সবজি ও মিষ্টির দোকানে খাবার খেয়ে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষের শরীরে এলার্জি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগবালাই ছড়াচ্ছে। এছাড়াও ক্যান্সারসহ বড় ধরনের বিভিন্ন রোগ-বলাই ছড়ানোর আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এতে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকলেও সেদিকে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী। দীর্ঘদিন যাবত উপজেলায় খাবারের এসব ভেজাল বিরোধী কার্যক্রমে প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। তবে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করতে হোটেল-রোস্তোরা এবং মিষ্টির দোকান ও কারখানায় খোলা অবস্থায় খাবার রাখাসহ খাবার তৈরি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রাখা, খাবারে ও মিষ্টি তৈরিতে রং মেশানো, ওজনে কম দেওয়াসহ বেজাল বিরোধী কার্যক্রমে সরকারের কঠোর নজরদারী জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন উপজেলাবাসী। 

উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক উৎপলা রানী দাশ বলেন, অপরিস্কার নোংরা পরিবেশে এসব হোটেলের খাবার ও মিষ্টি তৈরি হচ্ছে এগুলো খেয়ে শরীরে এলার্জি, ডায়রিয়া ও ক্যান্সারের মতো বড় ধরনের রোগও হতে পারে। কিন্তু আমার একার পক্ষে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি এসব হোটেল, ফাস্টফুড ও মিষ্টি দোকানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, যে সমস্ত খাবার হোটেল ও মিষ্টির দোকানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রয়েছে, সে সমস্ত হোটেলে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।