
জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকচক্রের দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ফলাফল বিপর্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাজিদ ইকবাল এই অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
গত ১৮ মার্চ দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে সাজিদ ইকবাল দাবি করেন, থিসিস সুপারভাইজরসহ অন্যান্য পরীক্ষকদের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক ও নম্বর পাওয়ার পরও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে থিসিসে ‘বি+’ (৩.২৫) গ্রেড দেওয়া হয়েছে। যেখানে তার ১ম থেকে ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত সিজিপিএ ছিল ৩.৮১, সেখানে ৮ম সেমিস্টারের ৬ ক্রেডিটের থিসিসে কম গ্রেড দিয়ে তার চূড়ান্ত সিজিপিএ ৩.৭৮-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ফলাফলে এই ধস পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।
সাজিদ আরও অভিযোগ করেন, জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে বিভাগের এক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেন। এর প্রতিবাদে তিনি সামাজিক মাধ্যমে একটি ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট দেন। এরপর থেকেই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি সিন্ডিকেট তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং তার ফলাফলে প্রভাব ফেলে।
তার অভিযোগ, থিসিস মূল্যায়নের জন্য তার কপি বিভাগীয় কমিটির অন্যান্য সদস্যদের না জানিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একজন তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানো হয়, যিনি কম নম্বর দিতে পারেন। এমনকি দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরীক্ষক পরিবহন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণা করেন, অথচ তার থিসিস ছিল পরিবেশনীতি (Environmental Policy) বিষয়ক।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন এবং অনুগত শিক্ষার্থীদের ভালো গ্রেড ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগেও এই চক্র অনুগত ছাত্রদের অগ্রাধিকার দিতে চায় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
থিসিসের সুপারভাইজর সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, “সাজিদ ইকবাল আমার তত্ত্বাবধানে থিসিস করেছে। আমি তার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম এবং আশা করেছিলাম সে ভালো গ্রেড পাবে। আমি এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক যে নম্বর দিয়েছি, তার ভিত্তিতে তার ভালো গ্রেড পাওয়ার কথা। কিন্তু গ্রেডশিটে তার প্রাপ্ত গ্রেডের সঙ্গে আমার মূল্যায়নের প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।”
তবে থিসিসের আরেক পরীক্ষক অধ্যাপক মো. শফিক-উর-রহমান বলেন, “আমি দ্বিতীয় বা তৃতীয় পরীক্ষক ছিলাম কি না, সেটা বলতে পারি না, কারণ এটি কনফিডেনশিয়াল বিষয়। একেকজন শিক্ষক একেকভাবে মূল্যায়ন করেন, তাই নম্বরের পার্থক্য হতে পারে।”
পরীক্ষা কমিটির প্রধান অধ্যাপক গোলাম মঈনুদ্দিন বলেন, “পরীক্ষা কমিটির একজন সদস্য বিদেশে চলে যান। তবে নিয়ম অনুযায়ী কমিটিতে দুই সদস্য থাকলেও চলে।”
এ বিষয়ে জানার জন্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফসানা হক এবং থিসিসের নিরীক্ষক সহযোগী অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. সালেহ আহাম্মদ খান বলেন, “এ বিষয়ে এখনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।”