Date: May 17, 2024

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / চট্টগ্রাম / জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক ইব্রাহিমের পরিবারে চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠা! - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক ইব্রাহিমের পরিবারে চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠা!

March 14, 2024 02:09:51 PM   নিজস্ব প্রতিবেদক
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক ইব্রাহিমের পরিবারে চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠা!

স্টাফ রিপোর্টার:
চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় রয়েছেন সোমালিয়ার দস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা ফেনীর  ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বিপ্লবের পরিবারের সদস্যরা। তিনি ফেনী জেলা দাগনভূঞা থানার মাতুভূঞা ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের মোমারিজপুর গ্রামের মৃত আবুল হোসেন ও রোসনারা বেগমের ছেলে। পরিবারে তার মা ছাড়াও স্ত্রী ও দুই সন্তান রেদোয়ান (৭) রিহান (৩) রয়েছে।

গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারেন গ্রুপের কমকর্তারা। এমভি আবদুল্লাহ নামে কয়লাবাহী জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে দস্যুরা।  এদিকে জলদস্যুদের জিম্মি দশার খবর প্রকাশ হলে চরম উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় পরে জাহাজের ২৩ নাবিক-কেবিন স্ক্রুর পরিবার।

ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বিপ্লবের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, তার মা রোসনারা বেগম দিনভর আহাজারি করছেন, আল্লাহ আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও, আল্লাহ তুমি রহমানুর রহিম, আমার ছেলে আমার কাছে ফেরত দাও।

রোসনারা বেগম বলেন, আমার পিতৃহারা সন্তান হঠাৎ এমন বিভীষিকাময় মুহূর্তে পড়তে হবে কল্পনা করিনি। দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন মা তিনি যেন আমাদের সন্তানদের আমাদের কোলে ফিরিয়ে দেন। রমজান মাসে সকল মুসলিমদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি জলদস্যুদের হাত থেকে আমাদের সন্তানকে যেন আল্লাহ আমাদের কোলে ফিরিয়ে দেয়।

দুই সন্তান নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন তার স্ত্রী সনিয়া বিপ্লব। তিনি বলেন, আমাদের সংসাদের দুই সন্তান রয়েছে। জলদস্যুদের হাতে আটকে পড়ার খবর শুনে দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে ছেলেরা।

তিনি আরও বলেন, আমার শিশু সন্তানদের দিকে তাকিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে বিনীত দাবি তাহার সন্তানদের পিতাকে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেন। আজকে দুই দিন আমার সন্তানের পিতার কোনো খবর পাইনি প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে  যন্ত্রণায়, দুশ্চিন্তায় কখন কি খবর আসে। জাহাজ মালিক অতি তাড়াতাড়ি বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করে জিম্মিদের উদ্ধার করেন ।

উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে ছোট ছোট বোটে এসে জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলেপড়া বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে সর্বশেষ জানা গেছে। অন্তত ১০০ জলদস্যু জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। সশস্ত্র অবস্থায় তারা জাহাজে ওঠে। এ সময় নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ খান এক অডিও বার্তায় জলদস্যুদের আক্রমণের বর্ণনা দিয়ে জাহাজ মালিক পক্ষকে জানান, জলদস্যুদের আক্রমণে কেউ হতাহত না হলেও ভীতি ছড়াতে জাহাজে উঠেই গুলাগুলি করেছে জলদস্যুরা। গত ১৩ ই মার্চ দুপুরের  পর হোয়াটসঅ্যাপে তিনি তার স্ত্রীকেও এক অডিও বার্তায় জানান, মুক্তিপণ না দিলে সবাইকে এক এক করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। সবার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি টাকা দেয়া হবে, তত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়া হবে। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার বন্দরে পৌঁছে।

এদিকে এ খবর প্রকাশের পর চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের স্বজনরা। প্রিয়জনকে দ্রুত ফিরিয়ে আনতে আকুতি জানিয়ে সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। জিম্মির পর কয়েকটি ভিডিও বার্তা নাবিকরা পাঠালেও, মোবাইল ফোন জব্দ করে নেয়ার পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

জিম্মিদের বরাতে পরিবারের দাবি, সোমালিয়ার জলদস্যুরা ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে। জিম্মি হওয়া ২৩ নাবিকের মধ্যে মাস্টার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, থার্ড অফিসার হিসেবে আছেন ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল, ডেক ক্যাডেট হিসেবে আছেন টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির।

এ ছাড়া চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এএসএম, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন নেত্রকোণার উদ্দিন মো. রোকন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর, ইঞ্জিন ক্যাডেট হিসেবে আছেন লক্ষ্মীপুরের খান আইয়ুব, ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বিপ্লব , এবিল সি-ম্যান (নাবিক) হিসেবে আছেন নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল, চট্টগ্রামের রহমান মো. আসিফুর, চট্টগ্রামের হোসাইন মো. সাজ্জাদ, অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে আছেন নাটোরের মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল, ওয়লার হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের হক আইনুল, চট্টগ্রামের শামসুদ্দিন মোহাম্মদ, বরিশালের হোসাইন মো. আলী, ফায়ারম্যান হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড হিসেবে আছেন চট্টগ্রামের উদ্দিন মোহাম্মদ নূর এবং ফাইটার হিসেবে আছেন নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ।