
ঝিনাইগাতী সংবাদদাতা:
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে আয়েশা খাতুন (৩২) নামে এক গৃহবধূ তার স্বামী ও শশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হয়ে ন্যয় বিচারের আশায় ঘুরছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। ভুক্তভোগী আজও পাননি তার ন্যায্য বিচার। নির্যাতিতা আয়শা খাতুন উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের আমজাদ হোসেনের মেয়ে।
সরেজমিনে গেলে আয়শার পিতা আমজাদ হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালে একি গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে ইউসুফের সাথে বিয়ে হয় আয়শার। তাদের এক ছেলে সন্তান হওয়ার পর স্বামী ইউসুফ আলী ও তার পরিবারের লোকজনের যৌতুকের দাবী ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্র নির্যাতনের শিকার হয় আয়েশা খাতুন। স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১৫ সালে তার স্বামী ইউসুফকে ডিভোর্স করে এক সন্তান নিয়ে ঢাকার গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকুরি শুরু করে আয়েশা। ডিভোর্সের দুই বছর পর ইউসুফ তার স্ত্রী আয়েশাকে পুনরায় বিবাহের প্রস্তাব করলে ছেলে সন্তানের মায়ায়-২০১৭ সালে নলকুড়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে তাদের পুনরায় বিবাহ সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে তাদের আরোও ১টি কন্যা সন্তান জন্ম হয়। বর্তমানে এক ছেলে ও এক মেয়ে সহ দুটি সন্তান রয়েছে তাদের। আয়েশার সংসার জীবনে সুখ শান্তি ও উন্নতির জন্য আয়েশার পিতা তাদের গৃহপালিত পশু বিক্রি করে ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দিয়ে ২০ শতাংশ জমি আয়েশার নামে ক্রয় করে দেন তার বাবা আমজাদ হোসেন। এছাড়াও তার মেয়ে জামাতা ইউসুফকে এক লাখ টাকায় ১'টি মোটরসাইকেলও কিনে দেন তিনি।
আয়শা খাতুন ও তার মা নুরেজা জানান, ইউসুফ ২০০৯ সালে আয়শাকে ঢাকায় বিয়ে করার আগে উপজেলার নুনখোলা গ্রামে মালা' নামের এক নারীকে বিয়ে করে তা গোপন করে রেখেছিল।পরে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তার প্রথম স্ত্রী মালাকে ইউসুফ তালাক দেয়। এছাড়াও ইউসুফ তার স্ত্রী আয়শাকে রেখে শ্রীবরদী উপজেলায় জনৈক হাসিনা নামক এক নারীকে তৃতীয় বিবাহ করে। ওই দিকেও ইমা নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে তার। নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসিনা তার সন্তানকে রেখে সেও স্বামী ইউসুফকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। হাসিনার শিশু সন্তান ইমাকেও কোলে পিঠে করে মাতৃস্নহে লালন পালন করে আয়েশা। স্বামীর সংসারের আয়েশা থাকা সত্যেও আবারও গোপনে একি গ্রামের সুলতানের কন্যা সুমিকে ৪র্থ স্ত্রী হিসেবে বিবাহ করে বলেও জানান তারা।
অপরদিকে আয়েশা বেগমের ক্রয়কৃত জমি ও যৌতুকের এক লক্ষ টাকা আত্মসাত করার জন্য জমির দলীল সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে আয়েশাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে অমানুষিক ও নানা ভাবে নির্যাতন করতে থাকে ইউসুফ ও তার পরিবারের লোকজন। স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আয়েশা নিরুপায় হয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান বলেন, নোটিশের মাধ্যমে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে গ্রাম আদালতে ডাকলে বিবাদীরা নানা অযুহাতে বার বার সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে গত ১১ আগস্ট দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের সকল সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষদের নিয়ে গ্রাম্য আদালত শুরু হয়। উভয় পক্ষের আলোচনা ও সাক্ষ্যপ্রমাণাদি গ্রহণ করার পর আয়েশার আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে, আয়েশার নামে জমি ক্রয়ের দলীল ফেরত দিতে ও ইউসুফকে প্রদত্ত মোটরসাইকেল ও দেনমোহরানার টাকা এবং দুই সন্তানের ভরণপোষণের বিষয়াদি উথ্থাপন করা হলে আয়েশার স্বামী ইউসুফ তা পরিশোধ করতে অস্বীকার করে ও তার পিতা আমজাদ আলী, মামা বাচ্চা মিয়া ও তাদের লোকজন গ্রাম আদালতের বিচারকে অবমাননা, অশালীন আচরণ, হট্টগোল করে মারাত্মক বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাদের হট্টগোল সৃষ্টির এক পর্যায়ে পরিষদে থাকা গ্রাম পুলিশগণ তা নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে ইউসুফ অসন্তোষ জনক আচরণ করে ইউসুফ তার লোকজনকে নিয়ে চলে যায়। পরিশেষে গ্রাম্য আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়ে আয়শা খাতুনকে ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্যে লিখিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করা হয়েছে বলেও চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান জানান।