
রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ে চাঞ্চল্যকর স্কুলশিক্ষিকা সান্ত্বনা রায় মিলি চক্রবর্তী (৪৪) হত্যা মামলায় স্বামী-ছেলেসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরকীয়ার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ঠাকুরগাঁও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন– ভুক্তভোগীর স্বামী সমির কুমার রায়, ছেলে রাহুল রায়, সমিরের ভাইয়ের ছেলে স্বপন কুমার রায় ও জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সোহাগ।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি আমিনুল ইসলাম সোহাগের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নিহত মিলি চক্রবর্তী। মোবাইল খুদে বার্তায় যোগাযোগের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারা যোগাযোগ রাখতেন। মিলির ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড জানতেন তার ছেলে রাহুল রায়। ফেসবুক মেসেঞ্জারের বার্তা ও ছবি দেখে বিষয়টি জানাজানি হলে স্বামী সমির কুমার রায় ক্ষিপ্ত হন।
২০২১ সালের ৮ জুলাই রাতে বিষয়টি নিয়ে মিলি চক্রবর্তীর সঙ্গে স্বামী ও ছেলের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা মিলিকে মারধর করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর সমির কুমার রায় তার ভাতিজা স্বপন কুমার রায়কে ডেকে আনেন। মিলিকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে বাড়ির পাশের গলিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিলি চক্রবর্তীর মৃত্যু আগুনে পুড়ে হয়েছে। তবে তার শরীরের বুক ও মাথায় আঘাতের চিহ্নও ছিল।
সিআইডির সিনিয়র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী বলেন, "ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।"
তিনি অভিযোগ করে বলেন, "প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির আব্দুর রাজ্জাক মূল রহস্য উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের চাপে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে মামলার গতিপথ ঘোরানোর চেষ্টা হয়।"
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৮ জুলাই ঠাকুরগাঁও শহরের মোহাম্মদ আলী সড়ক থেকে মিলি চক্রবর্তীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুই দিন পর পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ মামলায় আসামি সমির কুমার রায় ও স্বপন কুমার রায়কে গ্রেপ্তার করা হয়। রাহুল রায় ও আমিনুল ইসলাম সোহাগ জামিনে রয়েছেন।