
প্রায় সময়ই ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্বের সব শহরকে ছাড়িয়ে যায়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় ঘটাতে ২০১৯ সালে নীতিমালা প্রণীত হয়। উদ্বেগজনক হলো, বিভিন্ন সংস্থার নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালা অমান্য করেই সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এর ফলে রাজধানীর বায়ুদূষণ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
২০২২ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছয় বছরে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভালো মানের বায়ুতে শ্বাস নিতে পেরেছে। এরপরও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। ঢাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির যেন শেষ নেই। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতার কারণে দেখা যায়, ক’দিন পরপর একই রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। দেশের রাজধানী শহরের নাগরিক সুবিধার্থে যতটা যত্ন ও পরিকল্পনা নিয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় এ কাজগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন, তা মোটেই দৃশ্যমান নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর উদাসীনতা, অবহেলা ও সমন্বয়হীনতার মাশুল দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এখন ভয়াবহ ধুলাদূষণের শিকার রাজধানীবাসী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের কারণে মানুষ নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ঢাকা শহরের কিছু স্থানে নমুনা বিশ্লেষণে ২০০ প্রকার জৈব যৌগ শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকার বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর পদার্থ আছে তার অন্যতম হলো অতিরিক্ত সীসা। এটা শিশুর মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশুদের রক্ত পরীক্ষায় ৮০ এমজি বা ডিএল থেকে ১৮০ এমজি বা ডিএল সিসা পাওয়া গেছে, যা গ্রহণযোগ্য মাত্রার ৭ থেকে ১৬ গুণ বেশি। ২০২১ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস; ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। বায়ুদূষণের ফলে উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে ঢাকার বাতাসকে বিপজ্জনক অভিহিত করা হচ্ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দূষিত ঢাকার বাতাস। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একদিনও নির্মল বায়ু পায়নি এ শহরের মানুষ।
বাতাসের মান ৩১ দিনের মধ্যে ১০ দিনই ছিল বিপজ্জনক পর্যায়ে। আর ২১ দিনই ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাতাসের মানের কোনো উন্নতি হয়নি। বস্তুত নির্মাণকাজের পাশাপাশি যানবাহনের আধিক্যের কারণেও পরিবেশ দূষণ বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইটভাটাগুলো পরিবেশ দূষণের বড় কারণ। এ অবস্থায় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।