
রুবেল হোসেন:
লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ জানিয়েছেন, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে পিস্তল ও বন্দুক। এ হত্যাকাণ্ডে ৩৫ থেকে ৪০ ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন। ৪ থেকে ৫ ভাগে তারা অবস্থান নেয় বিভিন্ন পয়েন্টে। একজন ব্যক্তি সবার হাতে পিস্তল ও বন্দুক দিয়ে, পৃথকভাবে ভাগ করে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো নোমানকে হত্যা করার। প্রথমে তারা রাকিব ইমামকে গুলি করে, পরে সন্ত্রাসীরা নোমানকে গুলি করে হত্যা করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
বুধবার (৩ মে) রাত সাড়ে ৮টার পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে তদন্তের স্বার্থে তিনি হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করেননি।
এসপি আশরাফ জানান, নোমান-রাকিব হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত অন্যতম আসামি কদু আলমগীর ওরফে টাকলু আলমগীরকে গতকাল ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকান্ডের পর একটি সিসি টিভি ফুটেছে দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।
এর-আগে, সন্ধ্যায় কদু আলমগীর হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চন্দ্রগঞ্জ আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুল কবীর তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
একদিন আগে এ হত্যা মামলার তৃতীয় আসামি দেওয়ান ফয়সাল নামের আরেক আসামি একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তিনি রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ আরও জানান, ২৫ এপ্রিল দুপুরে নোমানের বিষয়ে দুইজন লোক মোটরসাইকেল যোগে তার আলমগীরের বাড়িতে যায়। তারা তাকে বলে- একটা টার্গেট আছে, তাকে সাইজ করতে হবে। তাকে সন্ধ্যায় বশিকপুরে যেতে বলে। সন্ধ্যায় আলমগীর ওই দুইজনের সাথে মোটরসাইকেল যোগে নাগেরহাট বাজারে যায়। এরপর তারা হেঁটে হেঁটে একটি একটি ফাঁকা মাঠে যান। সেখানে আরও ৩৫ থেকে ৪০ জন ছিল। তারা ৭ থেকে ৮ জন করে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে যায়।
একজন ব্যক্তি ছিলেন- যিনি অস্ত্র নিয়ে আসেন। সে সবার হাতে অস্ত্র তুলে দেন এবং কার্যক্রম ঠিক করে দেন। অস্ত্রের মধ্যে বন্দুক এবং পিস্তল ছিল। তারা বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেন। নোমানকে হত্যা করার জন্য। আলমগীর ও তার গ্রুপের লোকজন ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ওঁৎ পেতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর শুনতে পান নাগের হাটের পাশে গাছ-কাটার মেইলের সামনে বিকট শব্দ হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে আলমগীর ও তার গ্রুপের লোকজন ছুটে যান। গিয়ে দেখেন ছাত্রলীগ নেতা রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন। আর যুবলীগ নেতা নোমান একটি দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখানে তার ওপর ৩ জন ব্যক্তি গুলি করে। পরে আলমগীর ও তার সঙ্গে কথা গুলো নাগের হাট মাদ্রাসার সামনে গিয়ে সিএনজি ও মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যান।
টাকলু আলমগীর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে চায়। তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালতের বিচারকের সামনে জবানবন্দি দেয়। টাকলু আলমগীরের বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজি, মাদক ও অপহরণসহ ১০টি মামলা রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ। আলমগীর ২০১৩ সালের দিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী মাসুম বিল্লাহ লাদেন বাহিনীর সদস্য ছিল। তার মৃত্যুর পর সে ২০১৫ সালের দিকে আবুল কাশেম জেহাদীর বাহিনীতে যোগ দেয়।
উল্লেখ্য ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোবাইল নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থল গিয়ে স্থানীয় লোকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা নোমানকে মৃত ঘোষনা করেন। ছাত্রলীগ নেতা রাকিবকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান তিনিও। ২৬ এপ্রিল রাত ১ টার দিকে নিহত নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকে র্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।