Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / রংপুর / পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম নাজুক, দুর্ভোগে রোগীরা - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রক...

পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম নাজুক, দুর্ভোগে রোগীরা

February 13, 2025 08:17:54 PM   দেশজুড়ে ডেস্ক
পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম নাজুক, দুর্ভোগে রোগীরা

পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ব্যবস্থা চরম নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। ৩২ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। এর মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে, আর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য শিগগিরই চলে যাবেন আরও দুইজন। ফলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ মোট চিকিৎসক থাকবেন মাত্র ৪ জন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম মূলত চালাতে হবে মাত্র ৩ জন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে বিভাগের অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই করুণ। ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এক্স-রে) আব্দুর রাজ্জাককে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু এতদিনেও তার ডেপুটেশন বাতিল করা হয়নি। ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল নতুন একটি এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করা হলেও অপারেটর না থাকায় সেটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে কর্মরত সাইফুল ইসলাম দিয়ে এক্স-রে কার্যক্রম কোনোভাবে সচল রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, এক্স-রে বিভাগের এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাইরে থেকে বেশি খরচে এক্স-রে করাতে হচ্ছে, যা দরিদ্র রোগীদের জন্য বড় ধরনের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সিজার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গর্ভবতী নারীদের প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জরুরি সিজারের প্রয়োজন হলে রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক বা জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে একাধিক দালাল চক্র হাসপাতাল চত্বরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা রোগীদের কম খরচে চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। ফলে রোগীরা উচ্চমূল্যে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, জরুরি বিভাগেও রোগীদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে গুরুতর আহত রোগী এলে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মী ও ওয়ার্ডবয়রা রোগীদের কাছ থেকে ৫০-১০০ টাকা আদায় করে তবে সেবা দেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী।

পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ বলেন, “হাসপাতালে গেলে ডাক্তার পাওয়া যায় না। গত ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১১টার দিকে আমার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে কোনো ডাক্তার পাইনি। পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি একজন ডাক্তার পাঠানোর কথা বলেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও কেউ আসেনি, বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।”

শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। ডাক্তার নেই, সিজার হয় না, এক্স-রে মেশিন চালু নেই। গরিব রোগীদের জন্য এটি খুব কষ্টদায়ক। দ্রুত ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া দরকার।”

পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল জব্বার বলেন, “আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানিয়েছি। দ্রুত ডাক্তার নিয়োগের জন্য কাজ চলছে, আশা করছি সমাধান হবে।”

পীরগঞ্জের সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও জনবল নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এক্স-রে বিভাগ সচল করা, দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা এবং জরুরি বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।