Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ময়মনসিংহ / পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ৫০ গ্রাম প্লাবিত - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ৫০ গ্রাম প্লাবিত

October 04, 2024 08:16:10 PM   জেলা প্রতিনিধি
পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ৫০ গ্রাম প্লাবিত

টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সবকটি পাহাড়ি নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মহারশি, চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর বাঁধের অন্তত সাত স্থান ভেঙে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ও নালিতাবাড়ী পৌর এলাকা সহ অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মহারশি, সোমেশ্বরী, মৃগী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বেড়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাইগাতীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩২০ মিলিমিটার। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার আমন আবাদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, জানান কৃষকরা।

মহারশি নদীর খৈলকূড়ায় তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজার ও উপজেলা পরিষদ ইতোমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। নালিতাবাড়ীর শিমুলতলা, ঘাকপাড়া, মণ্ডলিয়াপাড়া, ভজপাড়া ও সন্নাসীভিটায় ভোগাই ও চেল্লাখালীর বাঁধ ভেঙেছে। নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক।

দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। পাহাড়ি ঢলের পানিতে আকস্মিক প্লাবিত হয়েছে নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীর অন্তত ১০টি ইউনিয়ন। তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির উঠতি আমন ফসল।

রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কালভার্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারছে না এসব এলাকার লোকজন, ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ঝিনাইগাতীর শাহজাহান আলী বলেন, “এর আগে এ রকম পানি দেখিনি। আমাদের বাড়িঘরে পানি। রান্না করতে পারছি না। রাস্তায় পানি ওঠায় চলাচলও করতে পারছি না। খুব কষ্টে আছি।”

ঝিনাইগাতী বাজারের ব্যবসায়ী আবু বকর জানান, “আমাদের দোকানপাটে পানি উঠেছে। অনেক ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। প্রতিবছরই নদীর বাঁধ ভাঙে আর আমাদের ক্ষতি হয়। কেউ এদিকে দেখে না। নদীর স্থায়ী বাঁধ চাই আমরা।”

কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, “আমাদের সব ফসল পানির নিচে। এ ধান এহন খাইয়া গেলেগা আমরা বাচমু কেমনে।”

ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ বছর ঝিনাইগাতীতে সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ও সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ আংশিক নিমজ্জিত রয়েছে। দ্রুত পানি নেমে না গেলে অনেক ক্ষতি হবে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ জানান, নালিতাবাড়ী উপজেলায় এ বছর ২৩ হাজার ২০০ হেক্টর আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর আমন আবাদ তলিয়ে গেছে। গতকাল রাতে ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সারা দিন বৃষ্টি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে সম্পূর্ণ তলিয়ে যাচ্ছে।