আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফেনী-১ (২৬৫) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ এই “ভি.আই.পি” আসনে তার অনুপস্থিতিতে সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। দরজায় কড়া নাড়ছে জাতীয় নির্বাচন, আর দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি একদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠ গরম রাখছে, অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে গোপনে প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি এখন প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের অতীত পারফরম্যান্স, মাঠপর্যায়ের জরিপ, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক তৎপরতা নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করছে।
ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা এবং পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসনটি বিএনপির জন্য ঐতিহাসিকভাবেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফুলগাজীর শ্রীপুর গ্রামে বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ি হওয়ায় এটি “খালেদা জিয়ার আসন” হিসেবেই অধিক পরিচিত; তিনি এখান থেকে ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে মোট চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে রাজনৈতিক বাস্তবতায় আসনটি নিয়ে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাইদ ইস্কান্দার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার মৃত্যুর পর থেকে এই আসনটি বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বহীনতায় ভুগতে শুরু করে। স্থানীয় নেতাদের অনেকে মনে করেন, দলের অন্তর্কোন্দল ও নেতৃত্বের শূন্যতার সুযোগেই একসময় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি নেতাকর্মীরা আশাবাদী যে, ক্ষমতাসীন দলের পতনের পর ফেনী-১ আবারও বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত হবে।
এদিকে গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে মনোনয়ন দিলেও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তিনি প্রত্যাশিত সাড়া পাননি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে তাঁর কার্যক্রম সীমিত; ফলে আসন্ন নির্বাচনে তাকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া যদি শারীরিক কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, তবে ফেনী-১ আসনে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এ তালিকায় অন্যতম আলোচিত নাম তরুণ শিল্পপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ওয়াহিদ উল্ল্যা মজুমদার মানিক।
ওয়াহিদ উল্ল্যা মজুমদার মানিক বর্তমানে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য এবং পরশুরাম উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকাস্থ ফেনী জেলা জাতীয়তাবাদী পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বেইলি রোড এক্সিকিউটিভ ক্লাব লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট। দলের দুর্দিনে রাজপথে সক্রিয় থাকা এই ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন এবং হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাঁকে ভদ্র, মার্জিত, শিক্ষিত ও পারিবারিকভাবে ঐতিহ্যবাহী প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করছেন। দলের অভ্যন্তরীণ জরিপেও তাঁর নাম উঠে আসছে বলে জানা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে তিনি ফেনী-১ আসনের টিকিট পেতে পারেন।
এই আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম বিষয়ক সম্পাদক বেলাল আহমেদের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ফেনী-১ আসনে বিএনপির জন্য পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন নির্ভর করবে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও তারেক রহমানের নির্দেশনার ওপর। বেগম খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে অন্য কোনো নেতার প্রার্থী হওয়ার প্রশ্নই উঠবে না। আর যদি পরিবার থেকে কেউ না আসেন, সেক্ষেত্রে দলীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, ওয়াহিদ উল্ল্যা মজুমদার মানিকের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।