
বরিশাল অফিস:
বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ‘কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ হই, দিন বদলাই’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘ক্যাম্পাস ওপেন ডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইনস্টিটিউট ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ‘স্কিলস-২১’ প্রকল্প আইএলও’র (ইন্টারন্যাশন্যাল লেবার অর্গাইনাইজেশন’র) যৌথ আয়োজনে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ড. মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে করা হয় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে। অনুষ্ঠানের প্রথমার্ধে সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধনের পরপরই নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকে একটি বিশাল র্যালি নগরীর সদর রোডসহ গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্ট প্রদক্ষিন করে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। এসময় অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ড. মো. রুহুল আমিন ও আইএলও’র কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এরপর সকাল ১১টায় বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি ও ক্যাম্পাস ওপেন ডে উদ্বোধন করা হয়। এতে কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছিল ক্যারিয়ার ওয়ার্কশপ, দক্ষতা প্রতিযোগিতা ও চাকুরির মেলা। প্রথমবারের মত সরকারি এই কারিগরি প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাকুরির মেলারও আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির মাঠ প্রাঙ্গণে কারিগরি সংশ্লিস্ট ১৬টি কর্মমুখী প্রতিষ্ঠানের স্টল প্রদর্শিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিস্ট দক্ষতাসম্পন্ন ইনস্টিটিউটের ১২ শিক্ষার্থীকে চাকুরি প্রদান করা হয়।
এদিকে অনুষ্ঠানের দ্বীতিয়ার্ধে সকাল সাড়ে ১১টায় কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহ সৃষ্টিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য করণীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. ওমর ফারুক। এসময় কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সকল শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা নিয়ে যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। এ শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে প্রতিবারের ন্যায় এবছরও নানামুখী উদ্যোগ ও সে অনুযায়ী যথাযথ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে হলে কারিগরি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই শিক্ষার আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলেই দেশ আরো উন্নীতের দিকে ধাবিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার আনোয়ার হোসেনকে। এদিকে অনুষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে আইএলওর কার্যক্রম সম্পর্কে প্রোগ্রাম অফিসার মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, আইএলও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করছে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিয়েও সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। এসময় তিনি কারিগরি শিক্ষা নিতে গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক গৌতম বাড়ৈ বলেন, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে পারলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে দক্ষ পেশাদার কর্মীর অভাব। প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সেটি পূরণ হবে। দেশ উন্নীত হলে সকলেই সমৃদ্ধ হবে। এ শিক্ষার মাধ্যমে দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে প্রচারণা কার্যক্রম বিষয়ক কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন আইএলও’র কমিউনিকেশন কর্মকর্তা ফারহানা আলম। তিনি কারিগরি শিক্ষার কার্যক্রম বিষয়ক একটি ভিডিও প্রদর্শণ করেন। সেখানে এ শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের ডিটিই মো. ইসরাইল হোসেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদ ও ১৫ আগস্টের কাল রাত্রিতে নিহতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষা একসময়ে পিছিয়ে পড়েছিল। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেটি এখন এগিয়ে চলছে। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যথাযথ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে ও তার সুযোগ সুবিধা পেতে হলে আগে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। সেক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে বিদেশে গেলেও উন্নত কর্মসংস্থানের মাধ্যমে এদেশের রেমিট্যান্স আরো অর্জিত হবে। দেশ সমৃদ্ধ হবে।
এরপর অনুষ্ঠানের দক্ষতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে সনদপত্রসহ টি-শার্ট প্রদান করা হয়। দ্বিতীয়ার্ধের শেষে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ড. মো. রুহুল আমিন। এসময় তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় দীক্ষিত হলে বেকারত্ব খুব কমই দেখা যায়। এ শিক্ষায় দীক্ষিত হলে আগামী ৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জিত হবে। এ শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে উন্নয়নে অংশীদার হওয়া যাবে। এসময় দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি। দিনব্যাপি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে ক্যারিয়ার ওয়ার্কশপ, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ওয়ার্কশপ ও ই-ক্যাম্পাস প্রদর্শন করার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।