
বরিশালে বিএনপির এক নেতাকে গ্রেফতার ও দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। রোববার বেলা ১১টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ জীবন।
লিখিত বক্তব্যে মোহাম্মদ জীবন অভিযোগ করেন, অবৈধ ড্রেজার ব্যবসা ও স্পিডবোট ঘাট থেকে চাঁদা তোলার প্রতিবাদ করায় চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল সিকদারকে শুক্রবার রাতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে জখম করেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুরুজ আহমেদ।
এই ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানায় সুরুজ আহমেদ, তার ভাই রমিজসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সাজ্জাদ।
মোহাম্মদ জীবনের বক্তব্য অনুযায়ী, সুরুজ আহমেদের রাজনৈতিক উত্থান হয় কুখ্যাত সন্ত্রাসী পানামা ফারুকের হাত ধরে। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি চরবাড়িয়া ইউনিয়নে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর ত্রাস কায়েম করেন। ২০০২ সালে যৌথ বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ আটক হন তিনি। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন।
জীবন আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির এক নেতার আশীর্বাদে চরবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দখল করেন সুরুজ। যদিও ওই কমিটি অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে, তবু তিনি নিজস্ব স্বার্থে প্রভাব বিস্তার চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তালতলী-পাতারহাট রুটের স্পিডবোট ঘাট দখল করেন সুরুজ। সেখানে চাঁদাবাজি শুরু করেন, যার বিরুদ্ধে স্পিডবোট চালক ও মালিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ছাড়া চরবাড়িয়া ইউনিয়নে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু ব্যবসা পরিচালনা করেন সুরুজ। বরিশাল জেলা প্রশাসনের তালতলী বন্দরে থাকা দুটি পুকুর দখল করে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। এর প্রতিবাদে ইউনিয়নের বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও সহযোগী সংগঠনগুলো একাধিকবার প্রতিবাদ জানালে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে সুরুজ ও তার ভাই রমিজ ধারালো অস্ত্রসহ মহড়া দিয়ে তালতলী বন্দরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। এ সময় চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল সিকদারকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো এবং চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। রেজাউল বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সুরুজ আহমেদের গ্রেফতার, বিচার এবং তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে চরবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুরুজ আহমেদ বলেন, “আমি চরবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব পদপ্রার্থী। অভিযোগকারী সাজ্জাদের বাবাও একই পদের প্রার্থী। তাই আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চরবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সোহাগ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সজল আহমেদ, যুবদল আহ্বায়ক বশির হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।