
মুস্তাফিজুর রহমান শিহাব:
নিউমোনিয়া রোগের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে এখনো শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এটি। গত কয়েক দশকের তুলনায় দেশে বর্তমানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কমেছে। তবে এখনো দেশে প্রতিবছর এ রোগে বহু শিশু মৃত্যুবরণ করে। গত বছর ঢাকার শিশু হাসপাতালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিল দুই হাজারের কিছু বেশি শিশু, চলতি বছর এরইমধ্যে দুই হাজারের বেশি আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে ভুগছেন বা যাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, এ ধরনের ব্যক্তির নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ রোগের প্রধান লক্ষণ জ¦র হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে জ¦রের লক্ষণ থাকে অস্পষ্ট। এ কারণে কাশি, শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বায়ুদূষণে শিশুরা নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ে। শিশুমৃত্যু ঠেকাতে এক বছর বয়সি শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকাসহ অন্যসব টিকা সময়মতো দেওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ রোগে আক্রান্ত হওয়া অনেক শিশুকে স্বীকৃত সেবাপ্রতিষ্ঠানে না নিয়ে নিকটবর্তী ওষুধের দোকান বা হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো কোনো হাতুড়ে চিকিৎসক যে ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই, সে ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে থাকেন। এতে রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করে। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হতে হবে। এ রোগ থেকে রেহাই পেতে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ধূমপান পরিহার করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো জটিল রোগ আছে, তাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের কাঠামো অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে আসা শিশুদের প্রায় ৪২ শতাংশ রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতায় ভোগে। হাসপাতালে আসা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত যেসব শিশুর অক্সিজেনস্বল্পতা থাকে, তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা অক্সিজেনস্বল্পতা না থাকা শিশুদের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। কাজেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে সহজেই কোনো ব্যক্তির শরীরে অক্সিজেনের স্বল্পতা নির্ণয় করা সম্ভব। তবে দরিদ্র মানুষের কাছে এসব স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত উপকরণ সুলভ নয়। কাজেই গরিব মানুষের কাছে এ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত উপকরণ সুলভ করার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অক্সিজেন সম্পর্কিত সরঞ্জামের অভাব দূর করা না হলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুসংখ্যা বাড়বে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে বিভিন্ন রোগে শিশুমৃত্যু বাড়ে। নিউমোনিয়া ও অন্যান্য রোগে শিশুমৃত্যু কমাতে দূষণমুক্ত পরিবেশ যেন নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।