
মৃত্যুর আশঙ্কা থাকার পরও নিপাহ ভাইরাস নিয়ে জনসচেনতা প্রায় নেই বললেই চলে। মূলত খেজুরের কাঁচা রস পান করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। খেজুরের রসে বাদুড় মুখ দেয়। সেখান থেকেই মানবদেহে ছড়ায় এ ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও মৃত্যুর হাত থেকে যারা ফিরে আসেন, তাদের জন্য এক ভয়াবহ সময় অপে¶া করে। বেঁচে থেকেও তিনি স্মৃতি হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন চিরতরে।
নিপাহ ভাইরাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব হয় ২০০৪ সালে ফরিদপুর জেলায়। সে বছর ফরিদপুরে নিপাহ ভাইরাসে ৩৫ জন আক্রান্ত হয়, তার মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। দেশে ২০১১ সালে মেহেরপুরে প্রথম নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ২০০৩ সালে হয় নওগাঁয়। বাংলাদেশে গত ২০ বছরে ৩২টি জেলায় নিপাহ’র প্রাদুর্ভাব হয়েছে ৩৮টি। গ্রেটার ইন্ডিয়ান ফ্রুট ব্যাট প্রজাতির বাদুরগুলো সাধারণত খেজুরের রস পছন্দ করে। এ প্রজাতির বাদুড়ের প্রজনন মৌসুম হলো জুলাই থেকে অক্টোবর মাস। আর ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত তারা বাচ্চা উৎপাদন করে। এ সময় বাদুড়ের খাবারের চাহিদা অনেক বেশি হয়। শীতকালে গাছে ফল কম থাকে বলে তখন খেজুর গাছ বাদুড়ের জন্য খুব উপাদেয় খাবারের আধার হয়ে যায়। খেজুর গাছে রস বের হওয়ায় স্থানটি চেটে রস খায় বাদুর। কখনো সেখানে প্রস্রাব ও পায়খানা করে। বাদুড়ের মুখের লালা, প্রস্রাব ও পায়খানার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস স্থানান্তর হয়। বাদুড়ে চাটা বা প্রস্রাব-পায়খানা করা স্থান থেকে সংগৃহীত কাঁচা রস পান করলে মানুষ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। এতে রোগী জ্বর ও মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। একপর্যায়ে খিচুঁনিও দেখা দিতে পারে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, ডায়রিয়া নানা ধরণের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। নিপাহ্ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কোন টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা নেই।
এ কারণে খেজুরের রস খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে তা নয়, এ ¶েত্রে কিছু বিষয়ে সতর্ক হলেই হবে। প্রথমত রস সংগ্রহ ও সংর¶ণের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। চেষ্টা করতে হবে দ্রুত রস বিতরণ করার এবং ঢেকে রাখার। এই ভাইরাস থেকে নিস্তার পাওয়ার প্রধান উপায় হল গাছগুলোর রস সংগ্রহের জায়গায় প্রতির¶ামূলক আবরণ বা স্যাপ স্কার্ট ব্যবহার করা, যেন বাদুড় এর সংস্পর্শে আসতে না পারে। তাই যারা রস সংগ্রহ করেন এবং যারা পান করবেন উভয়কেই এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। তাই এই ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকতে হলে সবার মধ্যে অধিক সচেতনতা বাড়ানো দরকার।