
কুমিল্লা প্রতিনিধি:
নিজের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান শহীদ হাফেজ মাসুদুর রহমানের বাবা অলিউল্লাহ (৭০)। তবে শুধু সন্তান হারানোর দুঃখই নয়, তার ক্ষোভের প্রধান কারণ এখন আরেকটি বিষয়- তার সন্তানের লাশকে কেন্দ্র করে চলা মামলাবাণিজ্য।
অলিউল্লাহ অভিযোগ করেন, তার শহীদ সন্তানের লাশ নিয়ে একদল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি ব্যবসা করছে। তারা কারো স্বার্থ রক্ষা কিংবা প্রতিশোধ নিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমার সন্তানকে হত্যার বিচার চাই, কিন্তু সেটার নামে যদি নিরপরাধ মানুষ হয়রানির শিকার হয়, তাহলে সেই বিচার কতটুকু ন্যায়সঙ্গত হবে? আমি চাই, এই মামলা ব্যবসার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হোক। না হলে আমার সন্তান কবরেও শান্তি পাবে না।”
কুমিল্লার বড়ুরা উপজেলার অর্জুনতা গ্রামে (৮ নং ওয়ার্ড) বেপারী বাড়ির বাসিন্দা অলিউল্লাহ তার সন্তানের কবর পরিষ্কার করতে করতে বলেন, “ভয়াবহ সেই দিনের কথা ভুলবার নয়। আমার ছেলে হাফেজ মাসুদুর রহমান ছিল কোরআনে হাফেজ। ঘটনার ২০ মিনিট আগেও আমার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। সে বলেছিল, 'বাবা, এদিকে গোলাগুলি হচ্ছে, আমাদের এলাকায় হচ্ছে কি না?' এরপরই জানতে পারি, আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে।”
রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ আনতে হয়েছে অনেক কষ্টে। কিন্তু অলিউল্লাহর হতাশা এখানেই শেষ হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, "কে বা কারা আমার সন্তানের খালাতো ভাই দাবি করে মামলা করেছে। শুনেছি, সেই মামলায় অনেক নিরপরাধ মানুষকে আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে। আমার সন্তানের জন্য যদি নিরপরাধ মানুষ মামলায় পড়ে, তাহলে তারা তো তাকে অভিশাপ দেবে! বলবে, 'তার জন্যই আমরা নিরপরাধ হয়েও মামলার ঘানি টানছি।' তাই আমি স্পষ্ট করে বলছি, আমার পরিবারের কেউ কোনো নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি। যারা এই মামলা বানিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।"
মামলার বাদী হিসেবে যিনি দাবি করেছেন, সেই কথিত খালাতো ভাই সাকিলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলোও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে, এ বিষয়ে মতামত জানতে যোগাযোগ করা হয় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা কুমিল্লার সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট [নাম প্রকাশিত নয়]-এর সাথে। তিনি বলেন, "এসব মামলার নির্দিষ্ট বাদী হয় না। আইনের ভাষায় বাদী বলতে বোঝায় সংবাদদাতা। এ ধরনের মামলায় রাষ্ট্রই বাদী হিসেবে গণ্য হয়। তবে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে কোনো সংবাদদাতা বা বাদী আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানির চেষ্টা করছে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।"
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের মামলায় পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে, যাতে নিরপরাধ ব্যক্তিরা হয়রানির শিকার না হন। নইলে প্রকৃত অপরাধীর বদলে নিরপরাধ ব্যক্তিরাই ভোগান্তির শিকার হবেন, যা আইনের অপব্যবহারের সামিল।”
অলিউল্লাহর আহ্বান, “আমি আমার সন্তানের জন্য বিচার চাই। কিন্তু সেই বিচারের নামে যদি নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হয়, তাহলে সেটা আমি মেনে নিতে পারব না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, মামলাবাণিজ্যে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যাতে আর কোনো নিরপরাধ মানুষ আমার সন্তানের হত্যার জের টানতে না হয়।”