.jpg)
রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা:
নওগাঁর রাণীনগরে এই প্রথম আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন কৃষক জহুরুল ইসলাম বাদল(৪৮)। ইউটিউব দেখে আদা চাষ শুরু করেন তিনি। মাত্র ৬ কাঠা পরিত্যাক্ত জমি থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার আদা বিক্রি হবে। এতে খরচ বাদে প্রায় ৬ গুণ বেশি লাভের আশা করছেন এই কৃষক।
উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের মৃত আজাহার আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম বাদল বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে কোনরকম ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। এর পর সাংসারিক অনটন আর বাবার অসুস্থ্যতার কারণে পড়াশোনায় আর এগিয়ে যেতে পারেননি। ফলে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে কৃষি কাজের সাথে জরিয়ে পরেন।
জহুরুল ইসলাম বলেন, গত ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে আসছেন। নতুন নতুন পদ্ধতিতে চাষ তার কাছে বেশ আগ্রহের। কিছু দিন আগে ইউটিউব চ্যানেল দেখে আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় করে আদা চাষের ধারনা নেন। এর পর কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে মাত্র ৬কাঠা পরিত্যাক্ত ছায়াযুক্ত জমিতে এক হাজার ৬০০ বস্তায় আদা রোপণ করেছেন।বর্তমানে প্রায় এক থেকে দেড় ফিট পর্যন্ত উঁচু হয়েছে আদার গাছ।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে বীজ ক্রয় করে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয়। এর পর বালুর উপর বীজগুলো রেখে তার উপর আবারো বালু দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। এপর প্রায় ৬/৭ দিনের মধ্যেই গাছ বের হলে চারাগুলো বস্তায় রোপন করতে হবে। তিনি বলছেন,ব্যবহৃত সিমেন্টের বস্তা ক্রয় করেছেন। সেই বস্তায় মাটি, বালু ডলোচুন, জৈবসার মিশ্রিত করে ১৫দিন পর দানাদার জাতীয় কিটনাশক, জিংক বোরণ ও রাসায়নিক সার মিশ্রিত করেছেন। এর পর আরো ১৫ দিন ফেলে রেখে বস্তায় ভরাতে হবে। এর ৬দিন পর বস্তায় চারা রোপন করতে হবে। গত চৈত্র মাসের শেষের দিকে চারা রোপণ করেছেন তিনি।
তিনি জানান, এক হাজার ৬০০ বস্তায় এপর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। হয়তো আরো ২/৩হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আদা গাছে তেমন রোগ বালায় না থাকায় শুধুমাত্র ১০/১৫দিন পর পর ছত্রাকনাশক ও কিছু কিটনাশক বিষ স্প্রে এবং বস্তায় পানি দিলেই গাছগুলো ভাল থাকবে। চারা রোপনের ৬/৭মাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায়।
তার ধারণা, প্রতি বস্তায় অন্তত দুই কেজি পরিমান আদা পাওয়া যাবে। এতে ৬কাঠা জমিতে এক হাজার ৬০০ বস্তায় প্রায় ৮০মন আদা পাবেন বলে আশা করছেন। পরিত্যাক্ত ছায়াযুক্ত এই জায়গা থেকে খরচ বাদে চলমান বাজার অনুযায়ী প্রায় ২লক্ষ ২১ হাজার টাকা লাভ হবে।
তিনি দাবি করে বলেন, এধরনের চাষে সরকার যদি আর্থিকভাবে সহায়তা করেন তাহলে আমার মতো প্রান্তিক কৃষকরা আরো উপকৃত হবেন। তাই সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহায়তা কামনা করেছেন।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বস্তায় আদা চাষ এটি একটি অত্যন্ত লাভজনক চাষ পদ্ধতি। বানিজ্যিকভাবে এই প্রথম জহুরুল ইসলাম আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আমরা সার্বিক ভাবে তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। আশা করছি অধিক লাভবান হবেন তিনি। সংসারের চাহিদা মিটাতে যে কেউ এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। এতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।