
শেরপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও, ধীরগতিতে পানি নেমে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ভেসে উঠেছে। আকস্মিক বন্যার তোড়ে পাকা সড়ক থেকে শুরু করে কাঁচা রাস্তা-ঘাট, ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমলেও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই ব্যাপক যে ধান চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখনো জেলার অন্তত ৭-৮টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ এবং ৬-৭টি আংশিক বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছে, আর এসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে।
বন্যার ফলে জেলার প্রধান সড়কগুলো থেকে শুরু করে কাঁচা রাস্তা, শত শত ঘরবাড়ি এবং ফসলি জমি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে শত শত একর আমন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বিশেষত নদীর পাড় ভেঙে বালুর স্তর পড়ায় চাষাবাদের উপযোগিতা হারিয়েছে অনেক জমি। এতে হাজারো কৃষক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, শেরপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি, শ্রীবরদী উপজেলার ১০টির মধ্যে দুটি, ঝিনাইগাতি উপজেলার সাতটির মধ্যে ছয়টি, নকলা উপজেলার নয়টির চারটি এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। এর ফলে এসব এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় এখনো চুলা জ্বলছে না, কারণ কাঁদা পানিতে সব একাকার হয়ে গেছে। ফলে রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
বন্যার ফলে বেশ কিছু এলাকায় গৃহহীন মানুষগুলো রাস্তার ধারে বা আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু ও অন্যান্য সম্পদও সরিয়ে নিতে হয়েছে। অনেক স্থানে এখনও পানি নামেনি, ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। স্থানীয় জনগণ রান্নার সামগ্রী ও খাদ্য সরবরাহের জন্য ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী, র্যাব, এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু দুর্গম এলাকায় সবসময় তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
শেরপুর জেলার মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, ঢলের ফলে প্রায় ছয় হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ৯৩ হাজার ৫০০ হেক্টর আমন জমির প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
শেরপুর জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, প্রায় ১০ থেকে ১৬ কিলোমিটার সড়ক বন্যার তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেরামতের কাজ চলছে, তবে গ্রামীণ এলাকার অনেক কাঁচা-পাকা রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষতি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী, নকলা ও ঝিনাইগাতি উপজেলায় বন্যার ফলে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। রোববার থেকে বৃষ্টি বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার থেকে নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্থানীয়রা নতুন করে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে এবং প্রশাসন বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। তবে পানির ধীরগতিতে নামার কারণে দুর্ভোগ কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এমতাবস্থায়, প্রশাসন ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর কার্যকর তৎপরতা বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জনগণের দুর্ভোগ কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।