
শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় অবস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) জনগণের একমাত্র আবাসন কেন্দ্রটি বর্তমানে অবহেলা এবং অযত্নের শিকার। সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুর্বৃত্তরা হামলা চালায় এই আবাসন পল্লীতে, যার ফলে বহু মূল্যবান জিনিসপত্র লুট হয়ে যায়। আবাসনে বসবাসরত হিজরা জনগণের অভিযোগ, হামলার পর তারা কোনও প্রতিকার পাননি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি জানার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০২১ সালের ৭ জুন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২ একর জমির উপর হিজরা জনগণের জন্য এই আবাসন পল্লী নির্মিত হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব সেখানে ৪০ জন হিজরা জনগণের মধ্যে জমি এবং ঘরবাড়ি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু ৪ সেপ্টেম্বর, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে আবাসন পল্লী থেকে আসবাবপত্র, গ্যাসের চুলা, টিউবওয়েলসহ সবকিছু লুট করে নেয়।
এ ঘটনার পর হিজরা জনগণ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন, মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করে, তবে তারা কোনও সুরাহা পায়নি। শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী হিজরা জনগণের সমস্যার প্রতি মনোযোগ দিয়ে তাদের পুনরায় আবাসন কেন্দ্রে ফিরিয়ে দেন এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও নগদ টাকা সরবরাহ করেন।
হিজরা আখি আক্তার বলেন, আমরা ভিক্ষাবৃত্তি নয়, কর্মের মাধ্যমে জীবনযাপন করতে চাই। আমাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হোক, এটি আমাদের সরকারের কাছে দাবি।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার জানান, প্রশাসন আমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করলেও, হামলার পর কোনও সাহায্য পাওয়া যায়নি। বিএনপি নেতা হযরত আলী আমাদের পুনরায় ফিরিয়ে দিয়েছেন, তবে এখন আর সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না। সরকার আমাদের পুনরায় সহায়তা প্রদান করুক।
এ বিষয়ে, সাবেক জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বলেন, আমি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হিজরা জনগণের পুনর্বাসন করেছি। বর্তমানে সরকারের উচিত তাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা।
এদিকে, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, এই আবাসন কেন্দ্রের সমস্যাগুলি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। যদি তৃতীয় লিঙ্গের কেউ লিখিতভাবে তাদের সমস্যা জানায়, তবে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বর্তমানে শেরপুরের হিজরা জনগণ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, তারা সরকারের কাছ থেকে পুনরায় সহায়তা ও সুযোগ সুবিধা আশা করছেন।