
শেরপুর সংবাদদাতা:
পারিবারিক দ্বন্ধের জের ধরে নিজের ছেলেকে ৩ দিন লুকিয়ে রেখে বোন জামাইয়ের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিথ্যা অপহরণ মামলা দায়ের করে হয়রারি করার অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এ মিথ্যা অপহরণ মামলার কথিত অপহৃত শিশু দিব্যি ঘুরে বেড়ালেও মামলার বেড়াজালে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে আপন বোন জামাই বিবাদি জিব্রাইল। এ মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্থানীয় গ্রামবাসী ইতিমধ্যে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
জানা গেছে, কথিত অপহরণ মামলার বাদি মাজেদার ১২ বছর বয়সের ছেলে মাদরাসা শিক্ষার্থী রায়হানের কাছে ১০০০০ টাকায় একটি মোবাইল ফোন বিক্রি করেন জিব্রাইল। ওই মেবাইলের ১০ হাজার টাকা রায়হান তার বাবার কাছ থেকে চুরি করে আনে বলে বাদি ও রায়হানের মা মাজেদা বেগম জানায়। এ ঘটনায় রায়হানের মা মাজেদা বেগম আপন বোন জামাইয়ের বিরুদ্ধে নিজের ছেলেকে লুকিয়ে রেখে গত ১৯ আগষ্ট শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। আদালত ওই অপহরণ মামলাটি সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। তবে এ মামলার বিষয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী ও বিবাদি জিব্রাইল কিছুই জানতেন না। কারণ জিব্রাইল ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীর গাড়ি চালকের চাকুরি করেন। এলাকায় আসেন মাসে দুই একবার। এদিকে সিআইডির তদন্তকারী এক কর্মকর্তা এলাকায় এ বিষয়ে তদন্তে আসলে জিব্রাইলের পরিবার ও স্থানীয়রা অবাক হয়ে যায় মামলা কথা শুনে। কারণ কথিত অপহৃত দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদিকে ঢাকায় অবস্থানকালে জিব্রাইলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপহরণ মামলা দারের করা এবং এ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে ভালুকা বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতা মানববন্ধন করেন। অপহরণের বিষয়ে স্বয়ং বাদি এবং ভিকটিম রায়হানের কথা বার্তায় নানা অসংলগ্ন ধরা পরে। স্থানীয়রা জানায়, রায়হানের মামা শেরপুরের জেলা জজ এর গাড়ি চালক আব্দুল বাতেনের কুচক্রে এবং তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সিআইডিকে দিয়ে তদন্ত করে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জিব্রাইলের স্ত্রী মনি বেগম আব্দুল বাতেনের ছোট বোন। জিব্রাইল মনি বেগমকে প্রেম করে বিয়ে করার কারণে ক্ষিপ্ত ছিলো বাতেন। সেই ক্ষোভের কারণেই এ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়। সেই সাথে বাতেন তার প্রভাব খাটিয়ে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে জিব্রাইলকে ভয়-ভীতি দেখানোরও অভিযোগ উঠেছে।
ভালুকা গ্রামের সাবেক মেম্বার চান মিয়া জানায়, রায়হানের বাবা দুলুর কাছে জানতে পারলাম জিব্রাইল দশহাজার টাকায় রায়হানের কাছে একটি মোবাইল বিক্রি করেছে। এই ক্ষোভের কারনেই দুলিলুর তার স্ত্রীকে বাদি বানিয়ে জিব্রাইলের নামে অপহরণ মামলা দিয়েছে মনে হয়। আমরা কোনদিন শুনিনি রায়হান অপহরণ হয়েছে। রায়হানকে গ্রামেই আমরা দেখতেছি।
অপহরণ মামলার বাদি মাজেদা জানায়, আমার ছেলের কাছে জিব্রাইল দশহাজার টাকায় মোবাইল বিক্রি করে এবং ঢাকায় ভালো মাদ্রাসায় ভর্তি করার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু সে আমার ছেলেকে গাড়িতে রেখে চলে যায়।
কথিত অপহৃত রায়হান জানায়, আমি এবং খালু একসাথে ঢাকার বাসে উঠি। ঢাকায় পৌছে ঘুম থেকে উঠে দেখি গাড়িতে খালু নেই। গাড়ি থেকে নামার পর তিন দিন অন্য একজনের বাড়িতে থাকি। পরে সেই লোক আমাকে ঝিনাইগাতির বাসে উঠিয়ে দেয়। তারপর আমি বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু রায়হান আশ্রয় দেওয়া লোকটির নাম ঠিকানা বুলে গেছে জানায়।
জিব্রাইল জানায়, তারা আমার নামে মিথ্যা অপহরণ মামলা দিছে। আমি যদি তাকে অপহরণই করতাম তাহলে তো তাকে পুলিশ উদ্ধার করতো। রায়হান বাড়িতেই ছিলো। মূল কারণ হলো রায়হান আমার কাছে একটি মোবাইল কিনে নেয়। তার কাছে মোবাইল বিক্রি করার কারনে তারা আমার নামে মিথ্যাা নাটক সাজিয়ে মামলা দিয়েছে। এটার সঠিক বিচার আমি চাই।
রায়হানের বাড়ির প্রতিবেশীরা জানায়, আমরা জানিইনা এই ছেলে অপহরণ হয়েছে। অপহরণ হলে আমরা শুনতাম। রায়হানকে আমরা বাড়িতেই দেখছি। এদিকে গ্রামবাসীরা নিরিহ জিব্রাইল যাতে এই মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পায় সেই আশায় করছেন।
এ বিষয়ে এই মামলার সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাফি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন কথা বলবে না বলে জানায়।
তবে সিআইডি’র জেলা কর্মকর্তা এএসপি শওকত আলম (পিপিএম) জানায়, তদন্ত চলছে। এ মামলায় নীরিহ কোন লোক যেন না ফাঁসে সে বিষয়ে লক্ষ্য করা হবে।