
সাংবাদিক হিসবে গত শুক্রবার একটা সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। সংবাদ সম্মেলনের মূল বিষয়বস্তু ছিল পাবনার সুজন হত্যার আসামীদের গ্রেফতারের দাবি ও উগ্রবাদ সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলায় করণীয় কী। হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বিষয়বস্তুর উপর নাতিদীর্ঘ বক্তব্য প্রদানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের সুযোগ দেওয়া হয়।
উনার আলোচনার মধ্যে তিনি প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানান। এবং বলেন, নেতা নির্বাচনের যে পদ্ধতি যুগের পর যুগ ধরে আমরা মেনে চলছি এটা ব্রিটিশ আমলের পদ্ধতি। এর দ্বারা কোনো পরিবর্তন সমাজে আসবে না। কেবল ক্ষমতার পালাবদলে দুটো গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধি হবে। জনগণের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা স্বচ্ছলতা আসবে না। প্রয়োজন হচ্ছে সিস্টেম পরিবর্তনের। তিনি প্রচলিত পুঁজিবাদী পাশ্চাত্য প্রবর্তিত গণতন্ত্রের বিকল্প সিস্টেম কেমন হতে পারে তারও ধারণা প্রদান করেন।
কিন্তু যখন প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয় তখন সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্নে আমি চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। সাংবাদিক পরিচয়ে আসা কিছু শশ্রুমণ্ডিত লেবাসধারী ব্যক্তি প্রসঙ্গের ধারেকাছেও না গিয়ে নারী সাংবাদিক কেন এসেছে, তাদের চেহারা দেখা যাচ্ছে এটা জায়েজ কিনা, বক্তার কোরআনের উচ্চারণ ইত্যাদি নিয়ে তুমুল বিতর্ক জুড়ে দিলেন। কোনোভাবেই তাদেরকে প্রসঙ্গে আনা যাচ্ছিল না। আমার সন্দেহ হল এরা আসলে সাংবাদিক কিনা আদৌ। তাদের আক্রমণের তীর মূলত হলের শেষ মাথায় দর্শকের সারিতে বসে থাকা কয়েকজন নারীর প্রতি।
এত অন্ধত্ব এই যুগে কীভাবে চলে, কে এদের মগজের তালা বন্ধ করে দিল? সেটা কি ধর্ম। জাতির ঐক্যের গুরুত্ব কী, ঐক্যবদ্ধ করা যাবে কী করে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য আমরা কী করতে পারি, জাতীয় সংকটটা কী, হেযবুত তওহীদ সেটা দূর করার জন্য কী প্রস্তাব দিচ্ছে সেটা তাদের মগজের বারো হাত উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। এরা কারা?
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘আমার পাশে এই যে নারী সাংবাদিক বসেছেন, আমার যদি তার সঙ্গে গায়ে গা লেগে যায় তাহলে সেটা কি উচিত হবে? উচিত ছিল নারীদেরকে না আনা, বা আনলেও আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা যেন তাদেরকে আমরা না দেখি।”
হেযবুত তওহীদের এমাম উত্তর দিলেন, রসুল তো এটা করেন নাই। রসুল সকল সমাবেশে এমন কি হজ্বের ময়দানে, যুদ্ধে মাঠের মত বিপদসংকুল পরিবেশেও নারীদেরকে নিয়ে গেছেন। বলেন রসুল ভুল করেছিলেন। রসুল যদি নিতে পারেন আমি কেন পারব না? আলেমদের তৈরি করা ওসব বিধান আমি মানি না। এটা আমার সাফ কথা। আমাদের মেয়েরা শালীনতার সাথে পুরুষের পাশাপাশি সব কাজে অংশ নেবে। এটাই ইসলামের বিধান। এটাই রসুলাল্লাহর জীবনচর্চা বা সুন্নাহ।
এটা একটা উদাহরণ দিলাম। যে ধর্মীয় বাড়াবাড়িগুলো নিয়ে এই জাতির ওলামারা জাতিকে খণ্ডবিখণ্ড করে রেখেছে, ইসলামের নামে দমবন্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সেগুলো নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে হেযবুত তওহীদের এমামকে বিধ্বস্ত করতে এসে নিজেরাই নিজেদের অবান্তর প্রশ্নজালে জড়িয়ে লেজেগোবরে হয়ে গেলেন।
যাইহোক আমার সেদিনের মিট দ্যা প্রেসের অভিজ্ঞতা তিক্ত। এটার পর থেকে প্রেস কনফারেন্সের নিয়মকানুন, বস্তুনিষ্ঠতা শব্দের অর্থ কী কিছুই মনে করতে পারছি না।
লেখক: রিয়াদুল হাসান, দৈনিক দেশেরপত্রের সাহিত্য সম্পাদক।