
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি:
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়ের বারোমারী সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লিতে দুই দিনব্যাপী ২৭ তম বার্ষিক ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তীর্থের প্রথমদিন বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় হাজার হাজার ক্যাথলিকের মোমের আলোয় আলোকিত হলো গারো পাহাড়।
তীর্থোৎসবের মূল আকর্ষণ হচ্ছে মোমবাতি প্রজ্বালন করে আলোক শোভাযাত্রা। এ উৎসবে সারা দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ অন্য ধর্মাবলম্বীরাও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। তীর্থযাত্রায় অংশ নেয়া খ্রিষ্টভক্তরা তাদের নানা মানত পূরণ করতে ঈশ্বর জননী মা মারিয়ার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা জানান ও তাঁর অকৃপণ সাহায্য প্রার্থনা করেন। প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ উৎসব তীর্থযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
'প্রার্থনার অনুপ্রেরণা ফাতেমা রানী মা মারিয়া’, ‘যে পরিবার একত্রে প্রার্থনা করে, সে পরিবার একত্রে বসবাস করে’।- এই মূল সুরে তীর্থোৎসবে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টভক্ত। এ ছাড়া ছিল খ্রিষ্টযাগ, নিশি জাগরণ, জীবন্ত ক্রুশের পথ, মহাখ্রিষ্টযাগসহ নানা অনুষ্ঠান।
পবিত্র খ্রিষ্টযাগের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় শুরু হয় তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে পবিত্র খ্রিষ্টযাগ শেষে রাত ৯টার দিকে আলোক শোভাযাত্রা, ১১টার দিকে আরাধ্য সাক্রান্তের আরাধনা, ১২টার দিকে নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান।
শুক্রবার সকাল ৮টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্তি হবে। এবার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহা ধর্ম প্রদেশের সহকারী বিশপ সুপ্রত গমেজ।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ তীর্থযাত্রা, ফাতেমা রানীর তীর্থোৎসব। ১৯৪২ সালে প্রায় ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বারোমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লিটি। ১৯৯৮ সাল থেকে বার্ষিক তীর্থস্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয়। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গমেজ ১৯৯৮ সালে এ ধর্মপল্লিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই পালন করা হচ্ছে তীর্থোৎসব।
শুধু শেরপুর নয়, দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পুণ্যার্থী অংশ নেন এই তীর্থযাত্রায়।
নেত্রকোনার বিরিশিরি থেকে তীর্থে যাওয়া রোবলা সাংমা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি মা ফাতেমা রানী এখানে জাগ্রত আছেন। এ জন্য আমরা দূরদূরান্ত থেকে আসি। উনাকে ভক্তি ও সম্মান করি। আমাদের মনের ইচ্ছা ও বাসনা মানত করি। সেগুলো পূরণ করেন তিনি।’
তীর্থোৎসবের সমন্বয়কারী রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারি বলেন, ‘এবারের তীর্থোৎসবে ধর্মীয় চেতনায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্রিষ্টভক্ত অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের এ আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
নালিতাবাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. দিদারুল ইসলাম বলেন, তীর্থোৎসবে ৩০০ এপিবিএন পুলিশসহ জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো পল্লীতে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।