Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস

January 27, 2024 01:27:31 PM   দেশজুড়ে ডেস্ক
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস

সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। বছরের আবর্তনে এদেশে দেখা যায় প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ। ষড়ঋতুর এদেশে প্রকৃতি যখন নিজের রূপকে পরিবর্তন করে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়, আমরাও প্রকৃতির সেই রূপকে আপন মহিমায় বরণ করে নেই।

বিচিত্র প্রকৃতির এই দেশে শীতকাল আসে তার শিশিরস্নাত সৌন্দর্য নিয়ে। শীতকালের প্রকৃত রূপ গ্রামের মানুষই সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করতে পারে৷ কারণ শীতকালকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের জীবনে আসে বৈচিত্র্যময় আয়োজন। শীতের সময়ে গ্রামে যে দৃশ্যটি স্বাভাবিকভাবেই চোখে পড়ে সেটি হলো খেজুর গাছে ঝুলে থাকা খেজুরের রস সংগ্রহের কলসি। শীতকাল এলেই গাছি-রা রাস্তার দুপাশে থাকা সারি সারি খেজুর গাছে খেজুরের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। খেজুরের রসের অনন্য স্বাদ যেমন মানুষ তৃপ্তি ভরে গ্রহণ করে, অন্যদিকে গাছিরাও রস বিক্রি করে জীবিকানির্বাহের জন্য অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়।

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে প্রথমে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোটো-বড়ো কলসিতে রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের মৌসুমে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে গাছের মাথার সাদা অংশ পরিষ্কার করে গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সকাল হলে খেজুরের রস-ভর্তি সেই কলসি নামিয়ে আনা হয়।

তবে দিন দিন প্রায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খেজুরের রস। আগে যেখানে গ্রামের পর গ্রাম, রাস্তার পর রাস্তা সারি সারি খেজুর গাছ লক্ষ করা যেতো, খেজুর গাছে ঝুলানো খেজুরের রসের কলসি দেখা যেতো, সে দৃশ্য এখন প্রায় বিলীন। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও এখন খেজুর গাছ কিংবা খেজুরের রস পাওয়া দুষ্কর।

কুমিল্লা সদরের রঘুরামপুর গ্রামের গাছি মোতালেব জানান, 'খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতো। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসারের খরচ চলতো। এখন গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বুড়ো হয়ে যাওয়ায় রস তেমন পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই।

তিনি আরো বলেন, 'কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০/৩০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ২০০/৩০০ টাকা।'

খেজুরের রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছ রোপণে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে বলে মনে করেন গ্রামের মানুষ। তাছাড়া বর্তমানে গাছির সংখ্যাও কমে এসেছে। এজন্য খেজুর গাছ রোপনের পাশাপাশি গাছিদের জীবিকানির্বাহ করতে পারার দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে খেজুরের রস, খেজুরের গুড় ও এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাতে আমাদেরই ঐক্যবদ্ধভাবে এই বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্যের দিকে নজর দিতে হবে। সর্বোপরি, সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে খেজুর গাছ রোপণ ও পরিচর্যা, গাছিদের জীবিকানির্বাহ ও খেজুরের রস সংগ্রহের দিকগুলো বিশেষ গুরুত্বে সাথে দেখার আহ্বান সচেতন মহলের।

ছবি ও লেখা :
রাশেদ হোসেন রনি
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।