Date: April 30, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / সারাদেশ / ঢাকা / ৪০ বছর শিক্ষকতা শেষে রাজকীয় বিদায় নিলেন ইসমাইল হোসেন - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

৪০ বছর শিক্ষকতা শেষে রাজকীয় বিদায় নিলেন ইসমাইল হোসেন

February 11, 2025 07:27:00 PM   স্টাফ রিপোর্টার
৪০ বছর শিক্ষকতা শেষে রাজকীয় বিদায় নিলেন ইসমাইল হোসেন

প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিষণ্ণ মনে ভিড় জমিয়েছেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। বিদায় সংবর্ধনার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে মঞ্চ, ফুলের তোড়া আর সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেজে উঠলো ব্যান্ডপার্টির বিশেষ সুর। চারদিক থেকে শুরু হলো পুষ্পবৃষ্টি। এক রাজকীয় আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হলো একজন শিক্ষককে। তবে এটি কোনো আনন্দ উৎসব নয়, এটি ছিল শিক্ষক এসএম ইসমাইল হোসেনের বিদায় সংবর্ধনা। দীর্ঘ ৪০ বছর শিক্ষকতা শেষে তার অবসর উপলক্ষে এলাকাবাসী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা এক বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে তাকে বিদায় জানান।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চর ভোজেশ্বর শেখপুরা কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনাবেতনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এসএম ইসমাইল হোসেন। যোগদানের পরপরই তিনি তার কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মন জয় করে নেন। ১৯৯২ সালে বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হলে তিনি ৫০০ টাকা বেতন পেতে শুরু করেন। একটানা পরিশ্রম আর অব্যাহত প্রচেষ্টায় তিনি বিদ্যালয়টির উন্নতি ঘটান এবং টিনের ঘরকে পরিণত করেন পাকা তিনতলা ভবনে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি পুরোপুরি সরকারিকরণ হলে তিনি সরকার নির্ধারিত বেতন পেতে থাকেন। অবশেষে ৪০ বছর শিক্ষকতা শেষে ৬৫ বছর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

তার বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে এলাকাবাসী ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ব্যতিক্রমী আয়োজন করেন। সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে ফুল ছিটিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নানা ধরনের পুরস্কার ও সম্মাননা।

এমন ব্যতিক্রমী বিদায় সংবর্ধনা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এসএম ইসমাইল হোসেন বলেন, “স্কুলের শিক্ষার্থীরা, প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এবং এলাকাবাসী আমাকে যেভাবে বরণ করে বিদায় জানাল, তা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বিদায়ের সময় মন খারাপ হলেও, এই ভালোবাসা পেয়ে আমি আনন্দিত।”

প্রাক্তন শিক্ষার্থী হেলেনা আক্তার বলেন, “আমি নিজে এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলাম, আমার মেয়েও এখান থেকে পড়াশোনা শেষ করেছে। ইসমাইল স্যার আমাদের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন। আজ তার বিদায়ের কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে।”

আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, “আমার শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল স্যারের হাত ধরে। তিনি আমাদের সন্তানতুল্য ভালোবেসে পড়িয়েছেন। আজ তার বিদায়ে আমার মন ভীষণ খারাপ।”

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম গাজী বলেন, “মাত্র দুই বছর হলো আমি এখানে যোগ দিয়েছি। স্যার কখনো সহকর্মী হিসেবে নয়, বরং ছোট ভাইয়ের মতো আমাকে আগলে রেখেছেন। তাকে বিদায় জানানো আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের।”

অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী আলামিন বলেন, “আজকের দিনটি আমাদের জন্য বেদনার। আমরা আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষককে বিদায় জানাচ্ছি, যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন। তার প্রতি আমাদের চিরকৃতজ্ঞতা থাকবে।”

শিক্ষক এসএম ইসমাইল হোসেনের বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের ভালোবাসা দেখে বোঝা যায়, একজন শিক্ষকের অবদান কতটা অমূল্য হতে পারে। এই সম্মাননা ছিল তার দীর্ঘদিনের নিরলস পরিশ্রম ও ভালোবাসার প্রতিদান।