Date: May 01, 2025

দৈনিক দেশেরপত্র

collapse
...
Home / জাতীয় / দেশজুড়ে দিনভর সংঘর্ষ, গোলাগুলি: নিহত ৯৮ - দৈনিক দেশেরপত্র - মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ

দেশজুড়ে দিনভর সংঘর্ষ, গোলাগুলি: নিহত ৯৮

August 04, 2024 07:12:17 PM   অনলাইন ডেস্ক
দেশজুড়ে দিনভর সংঘর্ষ, গোলাগুলি: নিহত ৯৮

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক সংঘর্ষ ও হানাহানির ঘটনা ঘটছে। গতকাল রোববার এই কর্মসূচির প্রথম দিনে সরকার-সমর্থক নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকাসহ ২০টি জেলা-মহানগরে ৯৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের ১৩ সদস্য এবং কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে পৃথক হামলায় হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরের চিত্রও ছিল অনেকটা একই। গত রাত ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষে সিরাজগঞ্জে পুলিশের ১৩ সদস্যসহ ২২ জন, রাজধানীতে ১১, ফেনীতে ৮, লক্ষ্মীপুরে ৮, নরসিংদীতে ৬, সিলেটে ৫, কিশোরগঞ্জে ৫, বগুড়ায় ৫, মাগুরায় ৪, রংপুরে ৪, পাবনায় ৩, মুন্সিগঞ্জে ৩, কুমিল্লায় পুলিশের সদস্যসহ ৩, শেরপুরে ২, জয়পুরহাটে ২, ভোলায় ১, হবিগঞ্জে ১, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১, সাভারে ১, বরিশালে ১ জন, কক্সবাজারে ১, গাজীপুরের শ্রীপুরে ১ জনসহ ৯৮ জন নিহত হয়েছেন।

নরসিংদীর মাধবদীতে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার পর ধাওয়া দিয়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। ফেনীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আটজনের মৃত্যু হয়। মাগুরায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ দুজন নিহত হন।

নিহত ৯৮ জনের মধ্যে বিস্তারিত নাম-পরিচয় জানা গেছে ৪৩ জনের। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ জন, পুলিশের ১৪ জন, শিক্ষার্থী ৯ জন, সাংবাদিক ১ জন ও বিএনপির ১ জন আছেন। কয়েকজনের নাম ও পরিচয় জানা গেলেও পেশা বা রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি।

শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি ঘিরে দেশের অন্তত ৩৮টি জেলায় জনপ্রতিনিধিদের বাসাবাড়ি, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও থানাসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৩টি স্থানে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসভবন ও নিজস্ব কার্যালয় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। চাঁদপুর শহরের জে এম সেনগুপ্ত রোডে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনির বাসায়, বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাসা, দিনাজপুরে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁওসহ ১৫টি থানা, ১টি রেঞ্জ কার্যালয়, ৪টি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং ২টি পুলিশ ফাঁড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের আরেকটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানানো হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশের তিন শতাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। অপর দিকে বিজিবি সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গতকালের সংঘাত-সংঘর্ষে বিজিবির অন্তত ৫৭ সদস্য আহত হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দিয়েছে। এতে সারা দেশ থেকে বিক্ষোভকারীদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের লাগাতার এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। মাঝে কয়েক দিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল।

একপর্যায়ে গত শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার এক জমায়েত থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে গতকাল শুরু হয়েছে তাঁদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। গতকালের আগপর্যন্ত এ আন্দোলন ঘিরে ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।