
আবির হোসেন:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। বিভাগের নাম পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত চলমান সাতটি ব্যাচের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এতে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিভাগের বর্তমান নাম অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে এবং ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ বিভাগের বর্তমান নাম থেকে ‘জিওগ্রাফি’ বাদ দিয়ে নতুন করে ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ করার দাবি জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে বিগত পাঁচ মাস ধরে প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও প্রশাসন ভবনের সামনে কর্মসূচি করলেও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে, নিজের ‘জিওগ্রাফি’ ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় ও ঘনিষ্ঠজনদের নিয়োগ দিতে নতুন করে বিভাগের নাম পরিবর্তনে বর্তমান সভাপতির ইন্ধনে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করা ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড জিওগ্রাফি’ বিভাগে ২০১৮ সালে চারজন শিক্ষক নিয়োগ হয়। এরপর ২০২১ সালের ৫ ডিসেম্বর বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ করতে বিজ্ঞান অনুষদের ডিনকে ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ১২৯ শিক্ষার্থী স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র দেয়। পরে একাডেমিক কমিটির সভায় চার শিক্ষকের মধ্যে ‘জিওগ্রাফি’ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা তিন শিক্ষক (ইনজামুল হক, ইফফাত আরা ও আনিসুল কবির) শিক্ষার্থীদের পক্ষে মত দিলেও বিপুল রায় বিপক্ষে মত দেন। এরপর থেকে বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।
২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৬তম সিন্ডিকেট সভায় বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ‘জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ করতে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর প্রায় দুই বছর পর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে পরবর্তী তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফায় বিভাগের নাম পরিবর্তনের দাবি তোলে। প্রথমবার নাম পরিবর্তনের সময় ঐক্যমতে থাকা ওই শিক্ষার্থীরা এবার সিনিয়রদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ এনে সমালোচনার জন্ম দেয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। ২০২৩ সালের ২৭ ও ২৮ অক্টোবর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সিসিটিভি ক্যামেরা ঢেকে বিভাগের নামফলক ভাঙচুর করে। প্রতিবেদকের হাতে এ ঘটনার দুটি ভিডিও ক্লিপ এসেছে। তবে তিন মাস আগে গঠিত তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।
১১ জানুয়ারি বিভাগের সভাপতি বিপুল রায়ের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ দেন সহকারী অধ্যাপক ইফফাত আরা। এর পাল্টা হিসেবে ২৫ জানুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইফফাত আরা ও ইনজামুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। এ অভিযোগের বিষয়ে দুই শিক্ষকই অভিযোগ খণ্ডন করে প্রশাসনে পাল্টা লিখিত দেন। এ ঘটনার পর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রথমবার নাম পরিবর্তনের সময় সিনিয়ররা স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছিল। এছাড়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্লাস না নেওয়া, অনিয়মিত ছুটি, ফিল্ডওয়ার্কে অনুপস্থিতি, খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম ও পরীক্ষা হলে দুর্ব্যবহারসহ একাধিক অভিযোগ তুলেছেন তারা। তবে তারা দাবি করেছেন, কোনো শিক্ষকের ইন্ধন ছাড়াই আন্দোলন করছেন।
অপরদিকে, বিভাগের বর্তমান নাম অপরিবর্তিত রাখতে চাওয়া সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বলেছেন, প্রথমবার নাম পরিবর্তনের সময় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সচেতনভাবেই স্বাক্ষর দিয়েছিল এবং সিদ্ধান্ত মেনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল। তবে দুই বছর পর একজন শিক্ষকের ইন্ধনে তারা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সভাপতি বিপুল রায় তার সার্টিফিকেটের সঙ্গে মিলিয়ে রাখতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামিয়েছেন। এতে ভবিষ্যতে শিক্ষক নিয়োগে তার ঘনিষ্ঠদের সুবিধা হবে বলে তারা দাবি করেন।
সাবেক সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ইনজামুল হক বলেন, ‘‘বর্তমান নামই যুগোপযোগী। দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘জিওগ্রাফি’ বিষয় রয়েছে। এ আন্দোলন বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হচ্ছে।’’
অভিযোগ অস্বীকার করে সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বিপুল রায় বলেন, ‘‘আন্দোলনে আমার সম্পৃক্ততা নেই। শিক্ষার্থীরা কেন আবারও নাম পরিবর্তন চায়, জানি না।’’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘‘বিষয়টি একাডেমিক কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। এক্সপার্ট কমিটি করে দ্রুত সমাধান করা হবে।’’