
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান। তিনি গত ৪ মে ময়মনসিংহ দ্রুত বিচার আদালতে এ মামলা করেন।
মামলার এজাহারে প্রধান আসামি করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে সহকারী রেজিস্ট্রার জাকিবুল হাসান রনিকে। এ ছাড়া ১৩০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে, যার ফলে মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১০ জন। এদের মধ্যে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক, কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মামলায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিয়ে গত ৬ মে তিন শিক্ষার্থী এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তারা হলেন- ৩২ নম্বর আসামি শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম, ৬২ নম্বর আসামি লিমন আহমেদ রিক্ত এবং ৭১ নম্বর আসামি মো. আজিজুল ইসলাম।
নাট্যকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ রিক্ত বলেন, “জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়ার প্রমাণ দিতে হবে, এমন ভাবিনি। সে সময় ছাত্রলীগের ভয়ে অনেকে সামনে আসেনি, অথচ আমি মাত্র একটি পোস্ট দেওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে পাঁচটি হুমকি ফোন পেয়েছিলাম। এখন এক ব্যক্তি, যিনি ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র, তিনি আমার নামে মামলা করলেন- আমাকে চেনার কথাই না। নিশ্চয়ই কারও পরামর্শেই নামগুলো সংযুক্ত করা হয়েছে।”
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, “২০১৯ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছি। ৪ আগস্ট আন্দোলনের সময় হামলার শিকার হয়েছি। অথচ সেই ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম নাতবুও আমার নামে মামলা। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ব্যক্তি আক্রোশ।”
আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম বলেন, “আমি ছাত্রলীগ করতাম, কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। কারও বিন্দুমাত্র ক্ষতি করিনি। অথচ আজ আমি সেই আন্দোলনের আসামি। তদন্তে যদি আমার দোষ প্রমাণ হয়, তবে কিছু বলার নেই। তবে এই আচরণ আমাদের ব্যথিত করেছে।”
অন্যদিকে, মামলার বাদী আশিকুর রহমান বলেন, “আন্দোলনে কে ছিল, সেটা নির্দিষ্ট করে বোঝা কঠিন। যারা নিরপরাধ দাবি করছে, তারা আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলেই হবে। হয়রানির উদ্দেশ্য আমার নেই। তদন্তের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত হলে আমি নিজেই সহযোগিতা করব।”
তবে অভিযোগ রয়েছে, আশিকুর রহমান নিজে আন্দোলনের কোনো কর্মসূচিতে সরাসরি অংশ নেননি। ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হওয়ায় অধিকাংশ আসামিকেও তিনি চিনেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি নিজেও চিহ্নিত আসামি হওয়ায় সরাসরি সব জায়গায় থাকতে পারিনি। তবে জিরো পয়েন্ট, ভালুকা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন স্থানে এবং অনলাইনেও সক্রিয় ছিলাম।"