
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে ২০২৫) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেন।
এ সময় শহীদ আবু সাঈদের ভাই আবু হোসেন বলেন, "জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ, যার আত্মত্যাগের বিনিময়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তীতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়। কিন্তু যার রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, তার বিচারের এখনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। কিছু চুনোপুঁটি ধরা হলেও যারা এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী, তাদের এখনো ধরা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরাসরি এই হত্যার সাথে জড়িত থাকা সত্ত্বেও এখনো বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন। আমি দাবি জানাচ্ছি, আবু সাঈদ হত্যা মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।"
ছাত্রদল কর্মী মো. ইমরান বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বারবার স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর অবশেষে একটি মামলা করা হয়। তবে এতে দু-একজন ছাড়া বাকিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবু সাঈদ হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীরা এখনো ফেসবুকে প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রধান আসামি হিসেবে সাবেক ভিসি, প্রভোস্ট এবং সহকারী প্রভোস্টের নাম থাকা উচিত ছিল, কিন্তু মামলায় তাদের নাম আসেনি। এ ধরনের কালক্ষেপণ ও প্রভাবশালী আসামিদের রক্ষার চেষ্টা পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।"
আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা মো. শাফি বলেন, "আমি আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ঢাকায় বসে কোনো তদন্ত হবে না। তদন্ত হবে রংপুরের মাটিতে। কার ইন্ধনে, কার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে এই মামলায় আসামি করা হচ্ছে, আর কাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চাই। আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি, সংগ্রাম করেছি, অথচ এখনো কোনো দৃশ্যমান শাস্তি দেখতে পাচ্ছি না। আমরা চাই, জুলাই আন্দোলনে যারা নারকীয়ভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক রহমত আলী বলেন, "আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার নয় মাস পার হয়ে গেছে, কিন্তু খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, আপনাদের আশ্বাসের ওপর আমরা আর ভরসা করতে পারছি না। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেই পুলিশ সদস্যরা এখনো ইউনিফর্ম পরে কর্মরত আছে। এ কলঙ্ক মুছতে হলে অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ঢাকায় বসে তদন্ত নয়, রংপুরে এসে শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে মামলার তথ্য নিতে হবে। যারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে হবে।"